ছাত্রের মৃত্যু ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে থানায় অভিযোগ রাবি রেজিস্ট্রারের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ করেছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ–পুলিশ কমিশনার মো. রফিকুল আলম অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবদুস সালাম নগরের রাজপাড়া থানায় এই অভিযোগ দায়ের করেন। এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও আনসার সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাবির তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে একই থানায় অভিযোগ দায়ের করে।

আরও পড়ুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯ অক্টোবর আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র এস জে এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় শাহরিয়ারকে সেখানে কোনো প্রকার চিকিৎসা না দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ারকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান। অথচ তাঁকে আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ওই ওয়ার্ডে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক ডাকাডাকির পর চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের কাছে আসেন। তাঁরা নানা অজুহাতে চিকিৎসা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এতে ওই ওয়ার্ডে বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ার মৃত্যুবরণ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাত্ররা অনেক ডাকাডাকির পর চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের কাছে আসেন। তাঁরা নানা অজুহাতে চিকিৎসা না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এতে ওই ওয়ার্ডে বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ার মৃত্যুবরণ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান এবং কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেই সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ব্রাদার, আনসার ও তাদের উচ্ছৃঙ্খল সহযোগীরা ন্যক্কারজনকভাবে শোকার্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা লাঠি এবং শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত ধারালো যন্ত্রসামগ্রী দিয়ে আনুমানিক শতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করেন। আহত শিক্ষার্থীর অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র, বারিন্দ মেডিকেলসহ রাজশাহীর অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী হারাধন নাথ, লিমন ফেরদৌস, রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন, আহাদ খন্দকার, ওয়াকিফ, ফেরদৌস, সাইফুর, আতিক, সৌরভ বিশ্বাস চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরও পড়ুন

হল থেকে কীভাবে পড়ল, ঘটনা তদন্তে কমিটি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হলের নিচে কীভাবে পড়লেন, তা তদন্তে হল প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আজ বিকেলে শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক গৌতম দত্তকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী অধ্যাপক মো. আনাম শাহরিয়ার ও সহযোগী অধ্যাপক মো. আশিক শাহরিয়ার।

প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার কীভাবে হলের ওপর থেকে নিচে পড়লেন, তিনি ওই দিক দিয়ে ছাদে যেতেন কি না, এ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী আছেন কি না, এ নিয়ে তদন্ত করা হবে। কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন