জেলায় জেলায় ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা করে জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার সিলেট, বগুড়া, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর ও পঞ্চগড়ে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
দল-মতনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শরিফ ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।
সিলেট
নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় কালেক্টরেট জামে মসজিদের সামনে বাদ জোহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তিনি এমন শোকাহত পরিস্থিতিতে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে না জড়াতে আহ্বান জানান।
জানাজায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, দলটির নেতা সালেহ আহমদ, সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জামায়াত নেতা আশরাফ আলী ফয়সল, এনসিপির নেতা শিব্বির আহমদসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা।
বগুড়া
ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, জেএসডিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে বক্তব্য দেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম ও বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান। বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্টরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে চোরাগোপ্তা হামলা করছে। কোনো ষড়যন্ত্র এ দেশের নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। হাদিকে হত্যা করে ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী শক্তিকে রুখে দেওয়া যাবে না।
কুমিল্লা
বিকেলে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে গায়েবানা জানাজা ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। পরে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতীকী কফিন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চ, কুমিল্লার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
গায়েবানা জানাজার আগে বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এক হাদি চলে গেছে, কিন্তু হাজার হাজার হাদি তৈরি হয়ে গেছে। আর যেন এমন ঘটনা না হয়, এ জন্য দ্রুত এ খুনের বিচার করতে হবে।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মিয়া মোহাম্মদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব চৌধুরী, হেফাজতে ইসলামের কুমিল্লার সদস্যসচিব মুফতি আব্দুল জিলানী, ইনকিলাব মঞ্চের কুমিল্লার আহ্বায়ক গোলাম মুহা. সামদানী, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের কুমিল্লা মহানগরী সেক্রেটারি নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজ, গণ অধিকার পরিষদের কুমিল্লার সদস্যসচিব গিয়াসউদ্দিন, এনসিপি নেতা সংগঠক আবু রায়হান প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ
বিকেলে নগরের চাষাঢ়ায় বাগে জান্নাত জামে মসজিদের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
নওগাঁ
শহরের নওজোয়ান মাঠে বেলা আড়াইটার দিকে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইবনুল আবেদীন, নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম, একই আসনের এবি পার্টির প্রার্থী কাজী আতিকুর রহমান প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ
ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের পর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে আজ দুপুরে প্রথমে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। এ সময় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক প্রাণকৃষ্ণ বসাক ও মোহাম্মদ মোজহারুল ইসলাম। বক্তারা জানান, খুনিদের বিচার করতেই হবে। তা না হলে দেশের মানুষ আবার জাগবে ও আন্দোলন গড়ে তুলবে।
নীলফামারী
সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে আড়াইটার দিকে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ওসমান হাদির সাহস অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর চিন্তা, ভাবনা ও চেতনা ধারণ করে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করবেন তাঁরা।
চাঁদপুর
চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে গায়েবানা জানাজা শেষে প্রতীকী কফিন নিয়ে শহরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। পরে শহরের বায়তুল আমিন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক প্রতিবাদ সভায় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ইশরাত জাহান বিন্দুসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা অবিলম্বে হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।
নেত্রকোনা
ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় শহরের কুরপার এলাকায় জেলা জামায়াত কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ছাদেক আহমাদের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বদরুল আমিনের সঞ্চালনায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়ার আগে জেলা জামায়াতের আমির বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির রেখে যাওয়া স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব ইনশা আল্লাহ। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন, সেই স্বপ্ন থেমে যাবে না।’
এদিকে ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দুর্গাপুর পৌর শহরের প্রেসক্লাব
মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি উপজেলা শাখার আয়োজনে এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ, উপজেলা উদীচীর সভাপতি শামছুল আলম খান ও উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম প্রমুখ।
ঝালকাঠি
শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বাদ জোহর গায়েবানা জানাজা হয়। এ ছাড়া নলছিটিতে হাদির স্মরণে দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। আজ শনিবার বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এসব দোকানপাট বন্ধ ছিল।
নলছিটি উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য শাহাদাত আলম বলেন, ‘ওসমান হাদি আমাদের নলছিটির সন্তান। আমরা তাঁকে হারিয়ে মর্মাহত। মরদেহ নিজ জন্মভূমিতে না আনতে পারায় হাদির স্মরণে শহরের সব দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
মাদারীপুর
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখ শাহি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আজ শনিবার বাদ জোহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাদারীপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী মুফতি আব্দুস সোবাহান, এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আজগর শেখ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরান মাহমুদ জামী প্রমুখ।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে বক্তারা বলেন, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার পরও আন্দোলন দমন করা যায়নি; এবারও যাবে না।
পঞ্চগড়
বিকেলে পঞ্চগড় সরকারি মিলনায়তন চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এনসিপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ও জাতীয় ছাত্রশক্তির উদ্যোগে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনটির জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু কায়েস, সদস্যসচিব মেহেদী হাসান, জাতীয় ছাত্রশক্তি পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক সাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব মোজাহার ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। পরে প্রতিবাদ র্যালি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাদ জোহর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গায়েবানা জানাজার আগে চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘আমাদের ভাই ওসমান হাদি মাত্র ৩২ বছর বয়সে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। এত কম বয়সে এই ইতিহাস কেউ করেনি। ওসমান হাদি যেমন প্রকৃত শত্রু চিনতে পেরেছিলেন, তেমনি তাঁর শত্রুরা প্রকৃত দেশপ্রেমিক মানুষ চিনতে পেরেছিল।’