ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ দুজনকে শেষবারের মতো দেখতে স্বজনদের অপেক্ষা
‘তিন দিন ধরে নদীর এক পাশ থেকে আরেক পাশ খুঁইজা বেড়াইতাছি, ভাইয়ের কোনো সন্ধান পাইতাছি না। এখন আর জীবিত পাওয়ার আশা করি না। অন্তত শেষবারের মতো যদি ভাইয়ে লাশটারে দেখতে পাই।’
কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের মালখানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনসুর আহমেদ। তাঁর চাচাতো ভাই হারুন অর রশিদ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইলে পদ্মার শাখানদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আছেন।
মনসুর আহমেদ বলেন, ‘গত দুই দিন একটি ট্রলার নিয়ে খুঁজেছি। আজকে দুইটি ট্রলার নিয়েছি। চাঁদপুর পর্যন্ত খুঁজব। মৃত ভাইয়ের লাশটা পেলে নিজ হাতে তার দাফন করব। তাকে না পাই, তার কবরটা আমরা দেখতে পারব।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় হাসাইলচর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের একটি বাল্কহেড চাঁদপুর থেকে বালু আনতে ওই পথ দিয়ে পদ্মা নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফার (১৫) লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) এবং রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার বাসিন্দা ও শিফার খালাতো ভাই মাহফুজুর রহমান (৩৫)।
আজ সকাল থেকে নিখোঁজ ব্যাক্তিদের সন্ধানে নদীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করেছেন নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যেরা। তাঁদের পাশাপাশি নিখোঁজের স্বজনেরাও দুর্ঘটনাস্থল থেকে নদীর কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করছেন।
নিখোঁজ মাহফুজুর রহমানের খালু নজরুল ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লাশ না নিয়ে বাড়িতে যাব না। খুঁজতে যত দূর যেতে হয়, যাব, যত দিন লাগে খুঁজব। শেষবারের মতো মাহফুজের মুখটি দেখব আমরা।’
চর আবদুল্লা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. হাসাত জামান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ দুই ব্যক্তির সন্ধানে সকাল থেকে নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল কাজ করছে। নদীর সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে দেখছেন তাঁরা। লাশ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বেপরোয়া গতিতে বাল্কহেড চালিয়ে ট্রলারের যাত্রীদের হতাহতের ঘটনায় গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টঙ্গিবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটির চালক আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বাল্কহেডের মালিক, চালকসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাল্কহেডের পাচক, লস্কর, ইঞ্জিনমিস্ত্রিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।