সুনামগঞ্জে ওয়াজ মাহফিল শেষে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুর, আটক ৫
ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (শিশুবক্তা হিসেবে পরিচিত) পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে—এই গুজব রটিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার একটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং তদন্তকেন্দ্রের বাইরের বাঁশের বেড়া ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলার বাদাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাদাঘাট বাজারে স্থানীয় হিফজুল ফজল পরিষদ নামের একটি সংগঠন দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে। গতকাল রাতে ওই মাহফিলে আলোচিত ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী বক্তব্যে দেবেন বলে প্রচার করেন আয়োজকেরা। কিন্তু পুলিশ আয়োজকদের জানিয়ে দেয়, রফিকুল ইসলাম সেখানে বক্তব্য দিতে পারবেন না। রফিকুল ইসলাম রাতে বাদাঘাট বাজারে এলেও মাহফিলে বক্তব্য দেননি। তাঁর বক্তব্য দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আয়োজকদের আলোচনার পর আয়োজকেরা রফিকুল ইসলামের বক্তব্য ছাড়াই মাহফিল চালিয়ে নিতে সম্মত হন। পরে রাত ১২টার দিকে ওই দিনের মাহফিল সমাপ্ত হয়। তখন একটি পক্ষ গুজব রটায়, রফিকুল ইসলামকে পুলিশ ধরে বাদাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এতে কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে মিছিল নিয়ে ওই তদন্তকেন্দ্রে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। তখন এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক দেখা দেয়। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়।
মাহফিল আয়োজক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম মাদানীকে মাহফিল স্থলে আনার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়। আমরাও প্রশাসনের কথা মেনে তাঁকে মাহফিল স্থলে আনিনি। কিন্তু মাহফিল সমাপ্ত ঘোষণা করার পর কিছু লোক হঠাৎ করে ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল শুরু করেন। পরে তাঁরাই পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। মাহফিল আয়োজকেরা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নন।’
বাদাঘাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহফিল সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়। পরে প্রচার করা হয় রফিকুল ইসলামকে নাকি পুলিশ ধরে এনেছে। এই গুজব রটিয়েই পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনেরও আওতায় আনা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।