কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, বোরকা ও জুতা উদ্ধার, গ্রেপ্তার আরও ৩

জামাল হোসেন
সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলায় আরও তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, বোরকা ও জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. রবি (৩৩), মো. শাহপরান (৩৪) ও লালপুর গ্রামের মাইক্রোবাসচালক সুমন হোসেন (২৭)। তাঁদের মধ্যে শাহপরান মামলার ৮ নম্বর আসামি জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসানের ভায়রা। রবি এই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ৯ নম্বর আসামি কালা মনিরের ভাই।

এর আগে গত ৬ মে এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইল, মনাইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার ও দাউদকান্দি উপজেলার গোপচর গ্রামের শাহ আলম ওরফে পা কাটা শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ নিয়ে এই মামলার এজাহারভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে ৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৮ আসামির মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হলেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহার করা কালো রঙের মাইক্রোবাসটির চালক সুমন হোসেনকে ৬ মে রাতে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে সুমনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গৌরিপুর হাটের চান্দিনা এলাকায় তাঁর ভাড়া বাসার খালি জায়গা থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। বোরকা পরা আসামিদের ব্যবহৃত দুই জোড়া ক্যানভাস সু (জুতা) এবং চালক সুমনের ব্যবহার করা ট্রাউজার উদ্ধার করা হয়। অপর দুই আসামি শাহপরান ও রবিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, শাহপরান ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন। ঘটনাস্থলে থাকা আসামিদের সঙ্গে ঘটনার আগে ও পরে যোগাযোগ করেন তিনি। আত্মগোপনে থাকার ব্যাপারে পরিকল্পনা ও সহযোগিতা করেন শাহপরান। অপর আসামিরা শাহপরানের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে আত্নগোপন করেন। গ্রেপ্তার হওয়া রবি ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করে শুটারদের তথ্য দেওয়া ও পালাতে সাহায্য করেন। শাহপরানের সহযোগিতায় রবিও ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। রবি আসামিদের পলায়নের পথ বাতলে দেন। গৌরিপুর পশ্চিম বাজারের হাবিবুর রহমানের ভবনের আমগাছের নিচ থেকে আসামিদের পরিহিত কালো বোরকা ও হিজাব উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন

এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, এই মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তার ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই মামলা গত শনিবার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন। জিয়ারকান্দি গ্রামের সুজন (৩২) ও আরিফ (২৮) নেপালে, জিয়ারকান্দি গ্রামের বাদল (৪৫) দুবাইয়ে, শাকিল (৩৫) ভারতে, জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসান (৩৯) সৌদি আরবে এবং কালা মনির (৪২) দেশে আত্মগোপনে আছেন।

আরও পড়ুন

উল্লেখ, গত ৩০ এপ্রিল রাত আটটার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার সুমাইয়া কনফেকশনারির সামনে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় নিহত জামাল হোসেনের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামাল হোসেন গৌরীপুর বাজারে ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর আগে গৌরীপুর মোড়ে খুন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেনের অনুসারী ছিলেন জামাল হোসেন। তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিবদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনি খুন হয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।