‘বয়স ওই গেছে। আগে কাম করতে পারতাম, এখন তনায় মরি গেছে (শক্তি শেষ)। স্ত্রী মারা গেছে সাড়ে তিন বছর অইব। দুই মেয়ে আছিল বিয়া দেলইছি। এক টুকরা ভিটা আছে। আর কিছু নাই। ঘর ভাঙি গেছে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দূর সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ের বাড়িত আশ্রয় নিছি। ওউ পরিবারে পাঁচজন মানুষ। অন্যে যেতা দেয়, ওগুইন দিয়া দিন চলে।’
কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমন গ্রামের আলাউদ্দিন (৮৭)। প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর একটি প্যাকেট পেয়ে আপ্লুত আলাউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন হাঁটাচলাও কষ্ট। আগে দিনমজুরি করে সংসার চালালেও এখন লাঠি হাতে চলতে হয়। যা সহযোগিতা পাইছি, ইতা দিয়া সপ্তা-দশ দিন চলতে পারমু।’
আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আলাউদ্দিনের মতো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণের প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ ছিল।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম ফয়সাল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন ও স্থানীয় সাংবাদিক শ্রীকান্ত পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি মানাউবী সিংহ।
ইউএনও এ কে এম ফয়সাল বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্ট দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, এটি অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত। সবাই যদি অসহায়দের পাশে দাঁড়ান, তবে বাংলাদেশ একসময় উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে। প্রথম আলো ও আইডিএলসির মতো অন্যরাও অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আইডিএলসি ও প্রথম আলো শুধু জকিগঞ্জ নয়, অন্যান্য এলাকাতেও সহযোগিতা করছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে জকিগঞ্জের সংবাদকর্মী আল হাসিব তাপাদার, উজ্জ্বল আহমেদ, কাউসার আহমেদ, প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি হুমাইরা জাকিয়া পুতুল, সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্যাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক রেজবী সিদ্দিকা ও সদস্য সৈয়দা তানিয়া ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দুই বছর আগে স্বামীকে হারানো ঘরছালিয়া গ্রামের গীতা রানী বিশ্বাস (৫২)। তাঁর দুই ছেলে কিশোর। একজন কাঠমিস্ত্রির কাজ শুরু করেছেন। ছেলের আয় এবং নিজের বাঁশ-বেতের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এমনও দিন গেছে তাঁর, এক বেলা খেয়ে অন্য বেলা অনাহারে কাটাতে হয়েছে। প্রথম আলোর সহযোগিতা পেয়ে অন্তত সপ্তাহখানেক খাবার নিয়ে তাঁর চিন্তা করতে হবে না বলে জানান তিনি।
গন্ধদত্ত গ্রামের হোসনা বেগম (৫২) বলেন, পরিবারে ছয় সদস্য। আয়-রোজগারের মানুষ নেই। পানি থাকায় আগের মতো কাজ নেই। খাওয়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই সাহায্যে কয়েক দিন শান্তিতে কাটাতে পারবেন।
বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।