‘পরিস্থিতি শান্ত করতে’ গিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন সাংসদ

সাংসদ আফজাল হোসেন

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে একে-৪৭–এর ভয় দেখিয়ে এসেছিলেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এবার ‘পরিস্থিতি শান্ত করার’ নামে সেখানে গিয়ে স্থানীয় সাংসদ আফজাল হোসেন নৌকায় ভোট চেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা স্থানীয় সরকার নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার হুমাইপুর ইউনিয়নে সভা করে নৌকার পক্ষে ভোট চান কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সাংসদ আফজাল হোসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রকিবুল হাসান। এর আগে গতকাল রোববার ওই ইউনিয়নে সভা করে নৌকায় ভোট চান বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন। তিনি সম্পর্কে সাংসদের ছোট ভাই।

নির্বাচন কমিশনের ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বাজিতপুরের ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে জনপ্রতিনিধিরা ভোট চাইতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কোনোভাবেই পারেন না। যদি করেন, তাহলে তা হবে আচরণবিধি লঙ্ঘন। পরে হুমাইপুরে তিন জনপ্রতিনিধির বিষয়টি নজরে আনলে বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৌকায় ভোট চাওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাংসদ ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি। তবে সাংসদ আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন, তিনি কোনো নির্বাচনী সভায় যোগ দেননি। একটি বক্তব্যকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতার নিরসন করতে হুমাইপুর গিয়েছিলেন।

সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত দুই হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা নৌকার মিছিল নিয়ে সভায় যোগ দেন।

আজ সকাল ১০টায় হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সভায় দেওয়া বক্তব্যে সাংসদ আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আসিনি। এসেছি পরিস্থিতি শান্ত করতে। কথা দিচ্ছি ভোটের দিন পরিবেশ শান্ত থাকবে। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে যাবেন।’ একপর্যায়ে তিনি উন্নয়নের প্রশ্নে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আহ্বান জানান। এরপর বলেন, ‘কোনো কারণে নৌকা জয় না পেলেও উন্নয়ন থেমে থাকবে না। তবে আমরা কেবল লজ্জা পাব, মনে কষ্ট পাব।’

সভায় এক ঘণ্টার মতো অবস্থান করে সাংসদ পরে বাজিতপুর মূল শহরে ফিরে যান।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অনুরোধ করেন।

এই সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত দুই হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা নৌকার মিছিল নিয়ে সভায় যোগ দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান।

আগের দিন একই স্থানে পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন নির্বাচনী সভায় যোগ দেন। তিনিও নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চান এবং শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ার বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।

জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করা যায় কি না—এমন প্রশ্নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাংসদ, মেয়র ও চেয়ারম্যান কেউ নির্বাচনী সভায় আসেননি। তাঁরা এসেছেন আবদুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্যের ঝামেলা মেটাতে। তবে তিনি স্বীকার করেন তিনজন জনপ্রতিনিধিই নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন।

আরও পড়ুন

পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আবদুল্লাহ আল মামুন যে কথা বলে এসেছেন, সেই কথা ঠিক নয়। এভাবে কোনো নেতা বক্তব্য দিতে পারেন না। এই বক্তব্য যে ঠিক ছিল না, আমি কেবল সেই কথা বুঝাতে গিয়েছি।’

একে–৪৭–এর ভয় দেখানোর ঘটনায় লিখিত অভিযোগ

গত শুক্রবার বিকেলে হুমাইপুরে এক সভায় দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের একে-৪৭ রাইফেলসের ভয় দেখানোর ঘটনার প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আজ সকালে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। অভিযোগকারী প্রার্থীর নাম জয়নাল আবেদীন খান। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।

অভিযোগে সেদিনের জনসভায় দেওয়া আবদুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য তুল ধরে বলা হয়, এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। এমনভাবে আতঙ্ক ছড়ালে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের পর হুমাইপুর ইউপিতে ভোটের পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এই বক্তব্য কেবল সরকারের ভাবমূর্তি নয়, জনগণের নিরাপত্তার প্রশ্নেও সীমাহীন হুমকিস্বরুপ বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ নেতার ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার কথা বলা হয়। এ ছাড়াও মূলধারার সংবাদপত্রে বিষয়টি ভালোভাবে প্রকাশের কথাও উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের রেকর্ডসহ গণমাধ্যমে কপি যুক্ত করা হয়।

অভিযোগকারী জয়নাল আবেদীন খান বলেন, জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতার আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখানোর পরই নির্বাচনী পরিবেশের কবর রচনা হয়ে গেছে। প্রতিকার করা না গেলে ভোট হলেও ফল পাওয়া যাবে না। সুষ্ঠু ভোটের প্রশ্নে অভিযোগটি করা হলো।

অভিযোগ পাওযার কথা স্বীকার করে ইউএনও মোছা. মোর্শেদ খাতুন বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হয়েছে। অভিযোগটির প্রতিকারের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগোনো হবে।

আরও পড়ুন