পুরোনো কাপড়ের দোকানে বানভাসি মানুষের ভিড়

বানের জলে ভেসে গেছে অনেক কিছুই। ভেসে গেছে বানভাসী মানুষের পরনের পোশাকও। সড়কের পাশে পুরোনো কাপড়ের স্তূপ নিয়ে বসা বিক্রেতার কাছ থেকে কাপড় কিনছেন অনেকেই। ছবিটি শুক্রবার সকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

আকস্মিক বন্যায় এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন অনেক মানুষ। পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে তাঁদের অনেকের ঘর ভেসে গেছে। ঘরে থাকা বিছানাপত্র ও আসবাবের সঙ্গে পরনের কাপড়ও গেছে ভেসে।

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকেই। ঘরে ফিরে তাঁরা পরার মতো কাপড় পাননি। এ পরিস্থিতিতে বানভাসি এসব মানুষ স্থানীয় হাট-বাজার থেকে পুরানা জামাকাপড় কিনছেন।

শুক্রবার বিকেলে সিলেটের ভোলাগঞ্জ বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। বাজারে বানভাসি লোকজন স্তূপ করে রাখা পুরোনো জামাকাপড় বেছে বেছে পছন্দ করছিলেন। পরে বিক্রেতার সঙ্গে দরদাম করে সেসব কাপড় কিনছিলেন একেকটি ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। পুরোনো তবে একটু ভালো মানের একেকটি জামা বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়।

দেখা হয় পাথরশ্রমিক ফাহিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি ভোলাগঞ্জের নড়াই এলাকার বাসিন্দা। পুরোনো জামা কিনতে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে সঙ্গে এনেছেন তিনি। কেনাকাটা করতে করতে প্রথম আলোকে ফাহিমা বলেন, ‘গতকাইল (বৃহস্পতিবার) গাউও গিয়া দেখি, ঘর ভাঙ্গি গেছে। যেখানো আমার ঘর আছিল, ইখানে ভিটার মাটি ছাড়া আর কোনতা নাই। জামাই, ফুয়া-ফুরি লইয়া সবে সেন্টারো সাত দিন এক কাপড়োই আছলাম।’

আরও পড়ুন
সড়কের পাশে পুরোনো কাপড়ের স্তূপ নিয়ে বসা বিক্রেতার কাছ থেকে কাপড় কিনছেন অনেকেই। ছবিটি শুক্রবার সকালে ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

ফাহিমা আক্তার আরও বলেন, ‘হাতো থোরা টাকা আছিল। ইতা ওউ সাত দিনো খাইয়া হেস করি লাইছি। এর লাগি গতকালকু কাপড় কিনতাম পারছি না। আইজ আধাদিন কাজ করিয়া মালিকের কাছতনে আগাম ৩০০ টাকা লইছি। ওগুন দিয়াই কাপড় কিনাত আইছলাম।’

নিজের এক মেয়ে ও তিন ছেলের জন্য পুরোনো কাপড়ের স্তূপ থেকে একটি করে জামা ও প্যান্ট পছন্দ করেন ফাহিমা আক্তার। নিজের ও স্বামীর জন্য বেছে নেন একটি পুরোনো সালোয়ার–কামিজ ও লুঙ্গি। এসব কাপড়ের জন্য দোকানদার তাঁর কাছে ৩০০ টাকা চান। ফাহিমা বলেন, ‘রুজি করছি ৩০০ টেকা। সবটি দিয়া কাপড় কিনলে খাইতাম কিতা। থোরা কাপড় বাদ দিয়া, চাইল-ডাইল কিনা লাগবো।’

আরও পড়ুন

ছেলে শরিফকে নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছেন পাথরশ্রমিক আলমগীর হোসেন। তাঁর বাড়ি ভোলাগঞ্জের ইটনায়। সাদা রঙের পুরোনো একটি জামা ছেলের গায়ের সঙ্গে মেপে দেখছিলেন তিনি। আলমগীর বলেন, ‘বানে বাড়ি ভাঙ্গি গেছে। পানির লগে ভাসি গেছে ঘরর হগলতা। ফুয়ার আর আমার পিন্দিবার কাপড়ও নাই। হাতো এত টেকাও নাই যেন, নতুন কিনতাম। এর লাগি ও গাট্টির মধ্যে থোরা ভালা কাপড় পছন করার চেষ্টা কররাম।’

বাজারে পুরোনো কাপড় বিক্রির সাতটি দোকান রয়েছে। সবগুলো দোকানে বানভাসী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তাঁরা স্তূপ করে রাখা কাপড় বেছে দেখছিলেন। কোনোটা পছন্দ হলে তার দাম দোকানির কাছ থেকে জেনে নিচ্ছিলেন। পছন্দের কাপড়ের দাম সামর্থ্যের বাইরে হলে তা আবার স্তূপে রেখে দিচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় দোকানদার রাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো কাপড়ের গাট্টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে। এখন তা মানভেদে ১৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কিছু জামা রয়েছে যেগুলোর দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তিনি আরও বলেন, বন্যায় যাদের বাড়িঘর ভেসে গেছে, তাঁদের অনেকেরই এখন পরনের জামাকাপড় নেই। এমন লোকজনই পুরোনো জামাকাপড় কিনতে তাঁর দোকানে বেশি আসছেন।

পাশেই আবুল কালামের দর্জির দোকান। পুরোনো কাপড়ের স্তূপ থেকে কেনা জামাকাপড়ে ছেঁড়া থাকলে বা আকারের পরিবর্তন (বড়-ছোট) করা প্রয়োজন হলে অনেকেই তাঁর কাছে সেলাইয়ের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ২২টি কাপড় সেলাই করেছেন জানিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকাল তনে বহুতে কাপড় কিনাত আইছে। কইতে গেলে হগলটি দোকানো কমবেশ ভিড় লাগাই রইছে।’

আরও পড়ুন