বর্জ্য সংগ্রহে শৃঙ্খলা এনেছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি

চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করে। সিটি করপোরেশনই বর্জ্য সংগ্রহকারীদের বেতন দেয়। এই খরচ গৃহকরের মধ্যেই যুক্ত থাকে। নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। ফলে বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে কোনো বাণিজ্য নেই।

বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডোর টু ডোর’। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড ছাড়া ৪০টিতে এ কার্যক্রম চালু রয়েছে। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৫০ হাজার হোল্ডিংয়ের মধ্যে ৮০ শতাংশের বর্জ্য এ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিবছর ১৭ শতাংশ গৃহকর নেয়, যার মধ্যে ৭ শতাংশ হলো পরিচ্ছন্নতা বাবদ। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৭ শতাংশ গৃহকরের ৭ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা বাবদ। এই পরিচ্ছন্নতা কর দিয়ে তারা সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের খরচ মেটায়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করায় নগরবাসীর জন্য সুবিধা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো ধরনের বাণিজ্য করার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহর ওয়ার্ডের আল ফালাহ গলি এলাকার গৃহিণী সুপর্ণা ইসলাম বলেন, আগে যেখানে–সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকত। ২০১৭ সালে ডোর টু ডোর কার্যক্রম চালুর পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। খোলা ডাস্টবিনগুলো দেখা যায় না। ময়লার দুর্গন্ধও লাগে না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরে এখন ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার। বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৯ লাখ ১৩ হাজার বিন (ময়লা রাখার পাত্র) বিতরণ করা হয়েছে। ময়লা সংগ্রহের জন্য কেনা হয়েছে ৭৫২টি ভ্যান। নিজস্ব তহবিল ও অনুদানের টাকায় এসব উপকরণ কেনা হয়।

বর্জ্য সংগ্রহের এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ১ হাজার ৯৭৬ শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রত্যেক শ্রমিক দিনে ৩৬০ টাকা পান। এতে সিটি করপোরেশনের বছরে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

জামালখানের মোমিন রোড এলাকার বাসিন্দা চন্দনা চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ভবনের নিচে ময়লা রেখে আসি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বেলা আড়াইটা-তিনটার দিকে আসেন। তাঁরা এসে ময়লা গাড়িতে তুলে নেন। এর জন্য তাঁদের টাকা দিতে হয় না।’

>

প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের লোকজন বাসা থেকে ময়লা নিয়ে যান
মাসে আলাদা কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না

তবে উপকরণ ও জনবলসংকটের কারণে কিছু এলাকায় এখনো ডোর টু ডোর ব্যবস্থা চালু হয়নি। বিভিন্ন আবাসিক সমিতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন টাকার বিনিময়ে সেখানকার ময়লা অপসারণ করে। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব এলাকা ডোর টু ডোরের আওতায় আনা হবে।

১৯৯৭ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রথম সরাসরি বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের পদ্ধতি চালু করে। তখন প্রতিটি বাসা থেকে ভ্যানচালকের বেতন দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে ২০ টাকা করে নেওয়া হতো। এখন আর আলাদা করে টাকা দিতে হয় না। সিটি করপোরেশনই ভ্যানচালকদের বেতন দিয়ে থাকে। আর হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে বাড়িওয়ালার বর্জ্য পরিবহন ব্যয় যুক্ত হয়ে যায়।

বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে প্রায় ৫০ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশ হোল্ডিং থেকেই সিটি করপোরেশন সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করে। আর নগরের কয়েকটি মহল্লার লোকজন সমিতির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৭ থেকে ১০টি করে ভ্যান রয়েছে। বাসাবাড়ি ও প্রধান সড়কে প্রায় ৪০০ ভ্যানচালক প্রতিদিন বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন। সিটি করপোরেশন থেকে তাঁদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।

নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ময়লা নিয়ে যান। প্রতি মাসে আলাদা করে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।