সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন

সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
ফাইল ছবি

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হ‌ুমায়ূন কবীরের আদালতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আগামীকাল বুধবার আবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি আবদুল লতিফ, সাবেক পিপি ও বর্ষীয়ান আইনজীবী এস এম হায়দার আলী, সাবেক পিপি ওসমান গণি, সাবেক পিপি তপন কুমার দাস, আইনজীবী সাবেক অতিরিক্ত পিপি আজাহার হোসেন, আইনজীবী শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ জিল্লুর রহমান, আইনজীবী তামিম আহম্মেদ, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন হাইকোর্টের আইনজীবী শাহানারা আক্তার, আইনজীবী আবদুল মজিদ, আইনজীবী মিজানুর রহমান, আইনজীবী কামরুজ্জামান প্রমুখ।

আরও পড়ুন

মামলার কার্যক্রমের শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুদীপ চ্যাটার্জী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও পিপি আইনজীবী আবদুল লতিফ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে অংশ নেন। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ও পুলিশের মামলা না নেওয়া, পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ মামলা নিলেও ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া, আদালতে নারাজি ও রিভিশন খারিজ হওয়াসহ তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে অবহিত করেন। পরে তাঁরা সাক্ষীদের দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে আসামিদের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় শাস্তি হতে পারে তার ব্যাখ্যা দেন।

রাষ্ট্রপক্ষ আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার পর আদালত পরবর্তী যুক্তিতর্ক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করেন।

আরও পড়ুন

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আমল রায় ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফিরছিলেন শেখ হাসিনা। পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এ সময় গাড়িবহরে থাকা ১৫–২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

তৎকালীন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ হাবিবুল ইসলাম ও তাঁর নেতা-কর্মীরা এ হামলার পেছনে ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ। এ ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে বিএনপির তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিন ভাগে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে সাক্ষী করা হয় ৩০ জনকে। তবে ৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি স্থগিত করা হয়। হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সাতক্ষীরার নিম্ন আদালতে গত তিন বছর বন্ধ হয়ে ছিল মামলাটির বিচারকাজ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন।

মামলায় এ পর্যন্ত ২০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৫০ আসামির মধ্যে ১৫ জন পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন