রাজধানীর জলাশয়-জলাধার রক্ষার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনাই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পালন না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। ঢাকার আশকোনা এলাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে ও জলাশয়-জলাধার রক্ষায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ঢাকাকে কোনোভাবেই বাঁচানো যাবে না বলে মনে করে আইপিডি। ঢাকাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সব ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে আইপিডি।
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইপিডি ওই প্রতিবাদ ও দাবি জানায়।
আশকোনা এলাকায় বিশাল আয়তনের একটি জলাশয় ভরাট করছে বেবিচক। আইনে জলাশয় ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময় ধরে জলাশয়টি ভরাটের কাজ চললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো নির্বিকার। জলাশয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দক্ষিণখান মৌজায় অবস্থিত। এটি ভরাটের ফলে বিমানবন্দর, দক্ষিণখান, উত্তরখানসহ আশপাশের এলাকার পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে। বিমানবন্দরেও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়ে আজ প্রথম আলোতে ‘আইন অমান্য করেই ঢাকায় জলাশয় ভরাট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহল কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রকল্পের নাম শোনা যায় প্রায়ই। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাট অন্যায়, অন্যায্য ও অবৈধ উদ্যোগ।
আইন অমান্য করেই ঢাকায় জলাশয় ভরাট
বিবৃতিতে বলা হয়, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার শঙ্কায় ঢাকাবাসী এমনিতেই শঙ্কিত। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে জলাশয়-জলাধারগুলোর পানি ধারণক্ষমতার ওপর। একটি নগর এলাকায় ১২-১৫ ভাগ জলাশয় এলাকা থাকা দরকার। ঢাকার জলাশয়-জলাধার এলাকা কমছে আশঙ্কাজনকভাবে।
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত জলাশয়-জলাধার নির্বিচার দখলের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানীর অভ্যন্তরে ড্যাপের চিহ্নিত আশকোনা এলাকার এই জলাশয় বেশ কিছুদিন ধরে ভরাট করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর মহাপরিকল্পনা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা, নগর উন্নয়ন আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশসংক্রান্ত আইন অমান্য করে এই জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট বন্ধের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের।
সরকারি সংস্থাগুলো যখন মহাপরিকল্পনা ও বিদ্যমান আইন না মেনে জলাশয় ভরাটে উদ্যোগী হয়, তখন জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে অন্যান্য দখলদারকে নিবৃত্ত করতে রাষ্ট্র ও সরকারের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
আইপিডি বলছে, রাজধানীর মহাপরিকল্পনার অধীন যেকোনো ধরনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগে ড্যাপের প্রতিপালন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের জন্য রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান আছে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বারবার এই বিধান লঙ্ঘন করছে। রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা কেন এই ধরনের জলাশয়-জলাধার ভরাটের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না, সেই কারণ উদ্ঘাটিত হওয়া দরকার।