'সুন্দরবন বাঁচাও' স্লোগান প্যারিসে

.
.

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের পাশেই বিভিন্ন নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নির্দিষ্ট এলাকা ‘গ্রিন জোন’। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা শুনতে গ্রিন জোন থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ শোনা গেল ‘সেভ সুন্দরবন, সেভ টাইগার, স্টপ রামপাল’ স্লোগান। উত্সুক হয়ে কাছে যেতেই দেখা গেল একদল বাংলাদেশি কপ-২১ লেখা ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ওই স্লোগান দিচ্ছেন। চারপাশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও আন্দোলনকারীরা ঘিরে ধরেছে তাঁদের। জানতে চাইছে কোথায় সুন্দরবন, আর রামপালই বা কী।
বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা একে একে বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর কাছে তুলে ধরলেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের পাশেই নির্মাণের পরিকল্পনাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি। জাতিসংঘের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর কাছেও তাঁদের দাবি, ইউনেসকো ঘোষিত সুন্দরবন রক্ষায় তারা যেন উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ থেকে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া অনেককেই দেখা গেল ওই বিক্ষোভে।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে ফ্রান্স উদীচী শাখার সভাপতি কিরণ্ময় মণ্ডল জানালেন, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষে তাঁরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সুন্দরবনের মতো যত বন আছে, সব বন রক্ষায় যাতে উদ্যোগ থাকে সেই দাবিও করছেন তাঁরা।
প্যারিস সম্মেলনে আসা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ যথেষ্ট গবেষণা ও পর্যালোচনা করেই রামপালে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এটি সুন্দরবন থেকে বেশ দূরে এবং এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এত কিছু করার পরও যদি ওনারা নাখোশ হন তাহলে আর আমাদের কিছু করার নেই।’
সম্মেলনের মূল কেন্দ্রে রাষ্ট্রগুলোর প্যাভিলিয়নে গিয়ে জানা গেল, ভারতীয় প্যাভিলিয়নে ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের ওপর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সুন্দরবন রক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সুন্দরবন নিয়ে ভারতীয় প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাংলাদেশে তো সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ আর ভারতে ৪০ শতাংশ। তাহলে বাংলাদেশ কেন ওই উদ্যোগে নেই—এর উত্তরে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে কাজে লাগিয়ে বন রক্ষা করছে। ভারতের সঙ্গেও যৌথভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল থেকে সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই আলোচনার সূচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সম্মেলনে আসা রাষ্ট্রগুলোকে একটি চুক্তিতে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা একমত হওয়ার পথে সব বাধা সরিয়ে ফেলুন।’
বান কি মুন বলেন, এই জলবায়ু সম্মেলনেই একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে একমত হতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একত্র হয়েছেন। ফলে আপনাদের পক্ষেই বিশ্বকে রক্ষার সবচেয়ে সফল ভূমিকা পালন সম্ভব।
সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের বক্তব্য দেওয়ার আগে কপ-২১ সভাপতি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফেবিয়াস প্যারিস চুক্তির খসড়া উপস্থাপন করেন। খসড়ায় অভিযোজন বাবদ বাংলাদেশের মতো জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলো যাতে অগ্রাধিকার পায় সেই বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জলবায়ু সম্মেলনে আসা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর অভিযোজন তহবিলে অগ্রাধিকার পাওয়ার বিষয়টি চুক্তির শর্তে যুক্ত করা একটি বড় অর্জন।
আজ প্যারিসের সময় সন্ধ্যায় এবং বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে বাংলাদেশের পক্ষে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে আসা ১৯৫টি দেশের মন্ত্রীরা প্রত্যেকে দুই থেকে তিন মিনিট বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। ওই বক্তব্যে তাঁরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।