সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন
বিদেশগামী অথবা বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নানা ধরনের সনদ সত্যায়নের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে প্রচলিত ম্যানুয়াল (সনাতনী) প্রথার বদলে আজ বুধবার সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করা হয়েছে। এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১ অনুযায়ী এই অনলাইন সত্যায়ন সম্পন্ন হবে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে সেবাগ্রহীতাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং প্রতিবছর সেবাগ্রহীতাদের ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের কার্যক্রম দেশের সুনাম বাড়াতে সহায়ক হবে।
এপোস্টিল সনদ
এপোস্টিল হলো একটি সনদ, যা এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১–এর নিয়ম মেনে কোনো পাবলিক ডকুমেন্টের সত্যায়নের সনদ হিসেবে প্রদান করা হয় এবং এটি সেই ডকুমেন্টের উৎপত্তির সঠিকতা প্রত্যয়ন করে। এপোস্টিল সনদ ও এর ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে এপোস্টিলকৃত ডকুমেন্টের উৎপত্তির সঠিকতা যাচাই করা যায়। এই কনভেনশনের পক্ষভুক্ত দেশের বর্তমান সংখ্যা ১২৭টি। তবে বর্তমানে ১১৭টি দেশে বাংলাদেশ থেকে সত্যায়নকৃত দলিল গ্রহণযোগ্য হবে।
বিদেশগামী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একাডেমিক সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট সনদ কিংবা ডকুমেন্ট প্রদানকারীসহ একাধিক কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন শেষে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস, বিদেশ গমনের পর সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সত্যায়ন করতে হয়। তা ছাড়া যেসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই, সেসব দেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সমবর্তীভাবে নিয়োজিত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দূতাবাস থেকে ডকুমেন্ট সত্যায়নের জন্য বাংলাদেশি সেবাপ্রার্থীদের সেসব দেশে যেতে হয়। ডকুমেন্টেশনের এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে নাগরিকদের অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।
নাগরিকদের এই সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এপোস্টিল কনভেনশন-১৯৬১–এ পক্ষভুক্ত হয়েছে। এপোস্টিল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাবলিক ডকুমেন্টের সত্যায়নের সনদ হিসেবে এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রদান করবে এবং এই এপোস্টিল সনদ ব্যবহার করলে সেবাপ্রার্থীরা সময় ও অর্থ ব্যয় করে বিদেশি দূতাবাস এবং বিদেশে গমন করার পরে ওই দেশে অবস্থিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।
বিদেশি দূতাবাসগুলোতে খরচ
ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতে প্রতি পাতা ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে তিন হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা সার্ভিস ফি আদায় করে থাকে। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হলে বিদেশি দূতাবাসে সার্ভিস ফি দিয়ে ডকুমেন্ট সত্যায়ন করতে হবে না। এতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ডকুমেন্টের হার্ডকপিতে ম্যানুয়্যালি সত্যায়ন করার সময় সেবা প্রার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দালালের খপ্পরে পড়েন। এপোস্টিল প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হলে সব ধরনের দালাল/মধ্যস্বত্বভোগী সম্পূর্ণ দূর হয়ে যাবে এবং জাল বা নকল সিল ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে সত্যায়ন করার প্রবণতাও দূর হবে।
বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা তাঁদের ডকুমেন্টগুলো সত্যায়নের জন্য মাইগভডটজিওভি পোর্টালে গিয়ে এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। ডকুমেন্টটি ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ যাচাইপূর্বক সত্যায়ন সম্পন্ন করে তা নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টটি প্রতিসত্যায়ন করে অনলাইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এপোস্টিল কনভেনশনের নিয়ম মেনে ডকুমেন্টটিতে প্রতিসত্যায়ন করবে এবং সত্যায়নের সনদ হিসেবে অনলাইনে ই-এপোস্টিল সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবা প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বরে নোটিফিকেশন যাবে। এরপর সেবা প্রার্থীরা তাঁদের মাইগভ পোর্টালের ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ডের ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করে ই-এপোস্টিল সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।