অর্থমন্ত্রীর জ্ঞান-বাণী অমৃত সমান

ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তান তাদের দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক কমিয়ে এনেছে। শ্রীলঙ্কার সাফল্য অবিশ্বাস্য। ৪৯ ভাগ থেকে সাড়ে ৬ ভাগে নেমে এসেছে। বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের ৩০ শতাংশের বেশি পতন ঘটেছে। তেলের দাম কোভিড–পূর্ববর্তী অবস্থায় নেমেছে। কিন্তু আমাদের ১০ শতাংশে গেড়ে বসে আছে। অজুহাত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। আসলে কি তাই? নাকি আমাদের নীতির ভুল?

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মহোদয় একজন অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। সবচেয়ে কম সময় কর্মস্থলে এসে চালান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। একজন মহাগুণী মানুষ না হলে সরকার তাঁকে এই জায়গায় ধরে রাখত না। তিনিই পৃথিবীর দীর্ঘতম রেকর্ডকৃত বাজেট বক্তৃতার প্রবর্তক।

তাজউদ্দীন আহমদ খোদ অর্থশাস্ত্রের মানুষ ছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে অর্থমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। দিনরাত গণমানুষের স্বার্থে খেটে মরতেন স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম এই নায়ক। প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু তাঁকেও বসিয়ে দিয়েছিলেন। সে তুলনায় আমাদের অর্থমন্ত্রী যেন এক অবিকল্প ব্যক্তিত্ব।

অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে মন্দগতির পরও সরকার তাঁকে বহাল তবিয়তে রেখেছে। এর থেকে ভালো অর্থপ্রতিভা সরকার নিশ্চয়ই আর খুঁজে পাচ্ছে না।

অর্থনীতি বোঝেন না

ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে এক মায়ের চাওয়া ছিল, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ আমরা যারা অর্থনীতির পেশার সঙ্গে জড়িত, তারাও চিন্তা করি, মানুষ কীভাবে দুধে-ভাতে থাকবে। অর্থমন্ত্রী আমাদের এই পেশার জন্য এক হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন। গত ৩১ আগস্ট তিনি এমন কিছু অমৃতসম বাণী বর্ষণ করেছেন, যা যুগপৎ বিস্ময়ের ও উদ্বেগের। তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা বলেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তাঁরা অর্থনীতিই বোঝেন না।’

অর্থমন্ত্রীর এহেন ঢালাও মন্তব্য ভয়ংকর ও দুর্বিনীত। নিজে একজন হিসাববিদ হয়ে, অর্থনীতির কোনো ‘একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড’ না থাকা সত্ত্বেও, অর্থনীতির সবকিছু আমাদের মন্ত্রী বুঝে গেছেন। অর্থনীতির উচ্চশিক্ষা নিয়ে যাঁরা স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ, তাঁরা যদি রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিশ্লেষণ বা মতামত প্রকাশ করেন—তা পছন্দ না হলেই এসব মানুষ অর্থনীতিই বোঝেন না।

অর্থমন্ত্রীর এহেন মূল্যায়ন প্রবাসে আমাদের নিয়োগকর্তাদের হাতে পড়লে আমরা যারা অর্থনীতির পেশায় ডালভাত খাই এবং দেশের অর্থনীতি নিয়ে কিঞ্চিৎ কথা বলি বা লেখালেখি করি, তাদের চাকরি থাকবে না।

কয়েক মাস আগে একজন জাঁদরেল অর্থনীতিবিদ টক শোতে মন্তব্য করেছিলেন যে দেশে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব অনুপস্থিত। তিনি যদি সত্য হন, তাহলে চাকরি অনেকেরই থাকার কথা নয়। বিএনপি আমলেও একজন হিসাববিদ অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে তিনি ‘অর্থনীতি ভালো নেই’ বললেই বক্তাটি ‘অর্থনীতি বোঝেন না’—এমন সুরে অভিযোগ করেননি। সঠিক জায়গার মানুষ সঠিক দায়িত্বে না থাকলে যা হয়, তাই হচ্ছে।

আরও পড়ুন

অনন্তজীবী পুতিন ফ্যাক্টর

‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন, ‘যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর।’ একই সুরে অর্থমন্ত্রীও সব সংকটের দায়ভার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। রাশিয়া থেকে কচু আর পেঁয়াজ আসে না। ডাব আসে না ইউক্রেন থেকে। পুতিনের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম বেড়েছিল। তা এখন কোভিড-পূর্ব অবস্থায় চলে এসেছে।

বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের ৩০ শতাংশের বেশি পতন ঘটেছে। পৃথিবীর সব দেশই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে। পারেনি বাংলাদেশ, মূলত অর্থমন্ত্রীর ভুল নীতির কারণে। এই ভুল নীতি তাঁর অজ্ঞতা বা বিভ্রান্তি নয়। এটি তাঁর ধনিকতুষ্টি ব্রতের সেয়ানি কৌশল। অর্থমন্ত্রী সুদহার বাড়তে দেননি, যেন ধনিকগোষ্ঠী শূন্য প্রকৃত সুদে যথেচ্ছ ব্যাংকঋণ নিতে পারে। গেয়েছেন বিনিয়োগ–বৃদ্ধির গান, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির দহনকালে অর্থশাস্ত্রবিমুখ এক অকাল সংগীত।

প্রয়োজন অর্থবিদ্যার, যার শিক্ষায় ক্রমাগত সুদহার বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতিকে ৩ শতাংশে নামিয়েছে। ভারত মূল্যস্ফীতিকে ৮-৯ শতাংশ থেকে এখন ৫ দশমিক ৭ শতাংশ নামিয়েছে।

আরও পড়ুন

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান অতিরিক্ত প্রকল্পঋণ, সামরিক ব্যয় ও রাজস্ব অক্ষমতার ফলে চরম বিপর্যয়ে পড়েছিল। তাদের তুলনায় আনা ঠিক হয় না। তারপরও তারা মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে। শ্রীলঙ্কা ৪৯ ভাগ মূল্যস্ফীতিকে এখন সাড়ে ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছে।

পাকিস্তান প্রায় ৪০ শতাংশের মূল্যস্ফীতিকে কয়েক মাসে ২৮ শতাংশে নামিয়েছে। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে খুঁটি গেড়ে বসে আছে। নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের ওপরে। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—প্রত্যেকেরই মূল্যস্ফীতি দমনে আনুপাতিক দক্ষতা বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

অর্থমন্ত্রী বললেন, যুদ্ধের মধ্যে কত দিন আপনি হিসাবমতো অর্থনীতি চালাবেন। বাংলাদেশ কি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বোমা সাহায্য দিচ্ছে? কথায় বোঝা যাচ্ছে যে তিনি আর হিসাবমতো অর্থনীতি চালাতে পারছেন না। এখনো নাকি এর জন্য দায়ী যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সহসা শেষও হবে না, ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অজুহাতেরও কমতি হবে না। শ্রীলঙ্কা বা ভারত এই অজুহাত দিয়ে বসে থাকেনি। সঠিক নীতি গ্রহণ করে ফল পেয়েছে।

পঞ্চ-সংকট ও ডাক্তার বদল

অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, তারপরও অর্থনীতি অনেক ভালো চলছে। সবাই বলে বাংলাদেশ সবার থেকে ভালো করছে। প্রশ্ন হলো, এই ‘সবাই’ কারা? এই ‘সবাই’-এর মধ্যে দুটো বৈশ্বিক মান–নির্ণায়ক সংস্থা নেই কেন যারা ১৪ বছরে প্রথম বাংলাদেশের মান কমাল? শুধু দু–একটি বিক্ষিপ্ত প্রশংসাবাক্য দিয়ে তো আর সামগ্রিক অর্থনীতির মূল্যায়ন চলবে না।

একজন সাধারণ হিসাববিদ বলে দিতে পারেন, একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বুঝতে হলে দেখতে হবে এর আয় বিবৃতি বা ‘ইনকাম স্টেটমেন্ট’ এবং এর স্থিতিপত্র বা ‘ব্যালান্স শিট।‘ একইভাবে একটি জাতির অবস্থা ধরা পড়ে এর আয়-ব্যয়ের বাজেট, পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাত, লেনদেনের ভারসাম্য ও রিজার্ভ পরিস্থিতি দেখে।

এই পঞ্চগ্রামেই সংকট শুরু হয়েছে, যা সরকারের অনেক উন্নয়ন অর্জনকে আজ ম্লান করে দিচ্ছে। প্রবৃদ্ধিও কমছে। এই পঞ্চ-সংকটের শুরু অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর, কোভিড বা পুতিন-যুদ্ধের আগে থেকেই।

আরও পড়ুন

রোগ বেড়েছে, ডাক্তার বদল প্রয়োজন

১০ বছর আগে ২০১৩ অর্থবছরে এই একই সরকার ১০০ টাকার বাজেটে ৭৭ টাকার রাজস্ব সংস্থান করত। এখন করছে মাত্র ৬৭ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘একনজরে বাজেট’ নামের দলিল থেকেই তা ধরা পড়ে এবং এটি বুঝতে অষ্টম শ্রেণির পাটিগণিতই যথেষ্ট। লেনদেনের আর্থিক হিসাব খাতে প্রথমবারের মতো প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের পতন শেষতক রিজার্ভকে এক সংকটপূর্ণ মাত্রায় এনে ঠেকিয়ে দিয়েছে, মূলত ভ্রান্ত বিনিময়–হার ও সুদ–হারের টুপির কারণে। তাঁর করহার কল্যাণ অর্থনীতির নির্বাসন প্রমাণ করে। বড়লোকের কর আদায় করতে না পারা এক অন্যায়, গরিবের ওপর কর আরোপ আরেক অপরাধ।

২০১৫-১৬ সালে সরকার উল্টো ব্যাংকঋণ ফেরত দিত। এখন সরকার সর্বাধিক মাত্রায় ঋণ নিচ্ছে ব্যাংক খাত থেকে, যা ব্যক্তি–উদ্যোক্তাকে ঋণবিমুখ করেছে। হিসাব যেভাবেই মিলিয়ে দেওয়া হোক না কেন, অর্থনীতিতে সরকার প্রণীত এই ‘ক্রাউডিং আউট’ অস্বীকার করা যাবে না।

প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ছাপাতে বাধ্য করা হয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশ রাজস্ব দায়িত্বশীলতার আইন দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এই টাকা মুদ্রণ অর্থনীতিতে প্রায় পাঁচ গুণ মুদ্রা জোগান বাড়িয়ে চলমান মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। এই মুদ্রা পুতিনের আদেশে ছাপাতে হয়নি। ছাপাতে হয়েছে রাজস্ব ব্যর্থতার কারণে। আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে এগুলোর দায়ভার প্রধানত অর্থমন্ত্রীর।

কথার এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আপনারা খারাপটা কামনা করেন কেন? ভালো কামনা করেন।’ যাঁরাই অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন বা লেখেন, তাঁরাই যে অর্থনীতির খারাপ কামনা করেন—এই ‘কামনাতত্ত্ব’ কোত্থেকে এল জানি না। দেশের জন্য দরদ কি শুধুই অর্থমন্ত্রী বা সমগোত্রীয় মন্ত্রীদের? আর কারও এর অধিকার নেই? ‘কামনা করা’ থেকেই যে অর্থনীতি ভালো বা খারাপ হয়ে যায়, এ রকম জ্যোতিষী বাণীও এই প্রথম শুনলাম।

গত মাসেই অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘অর্থনীতির ভয় কেটে গেছে।’ এখন বলছেন যে অনিশ্চয়তা যত দিন থাকবে, তত দিন হিসাবমতো অর্থনীতি চালানো যাবে না। অর্থনীতি কোনো কোম্পানির স্থির মূলধন নয়। একমাত্র চন্দ্রপৃষ্ঠ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকবেই। কিন্তু একে পুঁজি করে কোনো অর্থমন্ত্রী ‘হিসাবমতো অর্থনীতি চালানো যাবে না’—এমন বাহানা বানাননি।

হরপ্পা যুগের মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী যে কৃতিত্ব দাবি করেছেন, সে এক অদ্ভুত ও হাস্যকর যুক্তি। তাঁর দাবি, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার বছর মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনি তা প্রায় ৯ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন এবং এটি নাকি সাড়ে ৭ শতাংশ হতে যাচ্ছে।

প্রথমত বিশ্বব্যাংকের তথ্যভান্ডারে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া এই অঙ্কের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছ থেকেই তথ্য নিয়ে থাকে, খেয়ালমতো বানায় না। দ্বিতীয়ত মূল্যস্ফীতি হলো প্রতি মাসে নিয়ন্ত্রণের একটি চলক। অর্থমন্ত্রী নিজের ‘পারফরম্যান্স’ প্রমাণ করতে গিয়ে ১৭০ মাস আগের ‘হরপ্পা যুগের’ পরিসংখ্যান টেনে আনলেন কেন?

তৃতীয়ত আওয়ামী লীগের ২০১৪-১৮ মেয়াদে মূল্যস্ফীতি পাঁচের কোঠায় নেমে এসেছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের যৌথ প্রচেষ্টায়। এই অর্থমন্ত্রীর আমলে সেই পাঁচের মূল্যস্ফীতি এখন দশের কোঠায় উঠেছে। হিসাব মিলছে না। খেলাপি ঋণের মধুর সংজ্ঞায়ন করে খেলাপি সংস্কৃতিকে তিনি পুরস্কৃত করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকঋণের পরিমাণ এখন প্রায় চার লাখ কোটি টাকা। তাঁর আমলেই এটি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ‘পারফরম্যান্স’ ভালো নয়।

বৈশ্বিক তেলের দামের সঙ্গে এর সম্পর্ক গভীর, যাকে বলে জোগান ধাক্কা বা ‘সাপ্লাই শক’। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৪ বছরের শাসনামলের মধ্যে ২০১১ সালে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল সাড়ে ১১ শতাংশে। ২০১৬ সালে তা প্রায় সর্বনিম্ন সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে যায়। ২০২১ পর্যন্ত এ হার অক্ষুণ্ন ছিল।

২০১১ সালের মে মাসে তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১৪০ ডলার, ২০১৬ সালের জুনে তা ৬১ ডলারে নেমে যায়। পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার আগের মাসে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, তেলের দাম ছিল ৯৬ ডলার। যুদ্ধ শুরু হলে ২০২২ সালের মে মাসে তেলের দাম ১২০ ডলারে উঠে যায়।

২০২৩ সালের আগস্টে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৮০ ডলারে এসে নেমেছে, যা যুদ্ধপূর্ব দামের চেয়েও কম। তাই পুতিন-প্রযোজিত যুদ্ধের অসিলা মূল্যস্ফীতির অজুহাত হিসাবে এখন আর কাজে আসে না। অর্থমন্ত্রী কোনো গবেষণা বা তথ্য–উপাত্ত ছাড়াই পুতিনের ওপর দায় চাপিয়ে আপন ব্যর্থতার অজুহাত খুঁজছেন।

আরও পড়ুন

অর্থনীতিতে মনোযোগ

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ হচ্ছে, মানে হতে যাচ্ছে। কীভাবে হবে? এটা কি কোনো জ্যোতিষী বাণী? এটা সঠিক আর্থিক নীতির মধ্য দিয়ে অর্জন করা হবে, নাকি কোনোভাবে বানিয়ে দেওয়া হবে, সেটা বোঝা গেল না।

গত বছর বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামবে। অথচ গত জুনে এর মাত্রা ছিল অর্থমন্ত্রীর ‘স্বপ্নপ্রাপ্ত’ এই সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এই লক্ষ্য নির্ধারণে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস পদ্ধতি বা ‘ফোরকাস্টিং’ ব্যবহার করা হয়নি। পুরোটাই ছিল বাজেটারি ফ্রেমওয়ার্কের স্বার্থে মনগড়া সাজানো হিসাব।

শুধু হিসাবের চাতুর্য দিয়ে অর্থনীতির বৈতরণি পার হতে পারলে এই অর্থশাস্ত্রটিই ডাইনোসরের মতো লুপ্ত হয়ে যেত। আশা করব, হিসাববিদ অর্থমন্ত্রী অর্থশাস্ত্রের প্রতি সুবিচার করে অর্থনীতির সংকট উত্তরণে মনোযোগী হবেন।

  • ড. বিরূপাক্ষ পাল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক

আরও পড়ুন