এবার পদ ছাড়লেন চবির আরও দুই সহকারী প্রক্টর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার চারটি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আরও দুই শিক্ষক। এর মধ্যে রয়েছে দুটি সহকারী প্রক্টরের পদ, একটি আবাসিক শিক্ষকের পদ, আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালকের পদ।

আজ রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পৃথক চারটি চিঠি দিয়ে তাঁরা পদত্যাগ করেন। সব চিঠিতেই তাঁরা ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

পদত্যাগ করা ওই দুই শিক্ষক হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোরশেদুল আলম ও পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরুপ বড়ুয়া। সহকারী প্রক্টরের পাশাপাশি মোরশেদুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের জ্যেষ্ঠ আবাসিক শিক্ষক ও অরুপ বড়ুয়া চাকসুর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।

জানতে চাইলে মো. মোরশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে চান না। একই কথা বলেন অরুপ বড়ুয়াও।

দুজনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। তবে পদত্যাগের বিষয়টি এখনো গৃহীত হয়নি। এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের সময়ে পদত্যাগের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে গত বছর ১২ মার্চ প্রক্টরসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি পদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ১৬ শিক্ষক। এ ঘটনার পরের দিন আরও চারটি পদ থেকে তিন শিক্ষক পদত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে নিয়োগ নিয়ে শিরীণ আখতারের সঙ্গে সাবেক প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার দ্বন্দ্ব থেকে একটি পক্ষের শিক্ষকেরা এভাবে পদ ছাড়েন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তখন জানিয়েছিলেন।

উপাচার্য শিরীণ আখতার গত বছর ১২ মার্চে পদত্যাগের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তাঁদের (পদত্যাগকারীদের) কিছু অ্যাজেন্ডা ছিল। বিশেষ করে রবিউল হাসান ভূঁইয়ার। অ্যাজেন্ডাগুলো বিভিন্নভাবে পূরণ করার চেষ্টা করেছি। অনেক সময় পারিনি। রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিভিন্ন পদে কিছু কিছু নিয়োগ দিয়েছেন। পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বসাতে রবিউলই বাধ্য করেছেন। আরও কিছু নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি দিইনি। এ ছাড়া তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এতে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই সেটি দেওয়া যায়নি। আর অন্য যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, প্রশাসনের এসব পদে রবিউলই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।’

আরও পড়ুন

পালি বিভাগের নিয়োগ নিয়ে যা হয়েছিল

২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি ও ২৪ আগস্ট পালি বিভাগের প্রভাষক পদে আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়া আবেদন করেন। তবে তিনি স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম না হয়েও আবেদনপত্রে প্রথম বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব উল্লেখ করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। আবেদনপত্রে এমন ভুল তথ্য দেওয়াকে ‘জালিয়াতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই কমিটি।

সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়া একই বিভাগের শিক্ষক হওয়ার কারণে বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর তিনি সংশোধনীসহ আবেদনপত্র জমা দেন। তবে আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সে আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি নিয়োগের যাচাই–বাছাই কমিটি। কমিটির এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে অভি বড়ুয়াকে সাক্ষাৎকারে ডাকে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

গত ১৩ মার্চ ওই সাক্ষাৎকার নেয় নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড। ওই বোর্ডে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাসনানন্দ বড়ুয়া অভি বড়ুয়ার নিয়োগে আপত্তি দিলেও তাঁকে তালিকার ১ নম্বরে রেখে নিয়োগের সুপারিশ করে নির্বাচনী বোর্ড। তখন সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে এ নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছিল।

এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যেমে সংবাদ প্রকাশের পর গত বছর ১ আগস্ট অভি বড়ুয়ার নিয়োগ বাতিল করেছিল সিন্ডিকেট। তবে ওই সিন্ডিকেটই অভি বড়ুয়ার জালিয়াতি তুলে ধরা শিক্ষক শাসনানন্দ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাঁর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে গোপনীয় নথি প্রকাশ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ আনা হয়। এসব বিষয়ে সমালোচনার মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি ছাড়া অভি বড়ুয়াকে দৈনিক ৬৫০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে কর্মচারী পদে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন