আলোকচিত্রের ইতিহাসে সাইদা খানমের কাজ গুরুত্বপূর্ণ

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সাইদা খানমকে নিয়ে দুটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশের পথিকৃৎ নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম শুধু ছবি তোলেননি, ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ গল্পকারও। ১৯৪৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম গল্প। বহুমাত্রিক সাইদা খানমের কাজের বিস্তৃতি অনেক। তাঁর কাজ আলোকচিত্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্তর্মুখী হওয়ায় তাঁর সম্পর্কে জানা যায় তুলনামূলক কমই।

নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানমকে নিয়ে দুটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে উঠে এল এসব কথা। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত হয় এ প্রকাশনা উৎসব। দুটি বইয়ের একটি ‘সাইদা খানমের রচনা সংগ্রহ’ সম্পাদনা করেছেন সারা ফাতিমা। আরেকটি হলো ‘একজন সাইদা খানম’। বইটি লিখেছেন আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজ। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাইদা খানমকে নিয়ে নির্মিত একটি সাদাকালো তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বই দুটি পরস্পরের পরিপূরক। আলোকচিত্রের ইতিহাসে ‘একজন সাইদা খানম’ কাজটি গুরুত্বপূর্ণ। বইটি পঞ্চাশের দশকের শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা মানুষদের প্রতি তর্পণ। একইভাবে সাইদা খানমের রচনা সংগ্রহও তাঁকে জানার জন্য সমান অর্থপূর্ণ। তবে দুটি বই নিয়েই সামনে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর তোলা এমন অনেক ছবি আছে, যে ছবিগুলো আমরা চিনতাম, কিন্তু বহুদিন ধরে জানতাম না এ ছবির আলোকচিত্রী সাইদা খানম।’

অভিনেত্রী আলেয়া ফেরদৌসীর বক্তব্যে উঠে আসে সাইদা খানমের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে থাকা পারিবারিক সম্পর্কের স্মৃতিচারণা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস একসঙ্গে থাকা, বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরে সাইদা খানমের সঙ্গে ছবি তুলতে বের হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন

চিত্রশিল্পী মতলুব আলী বলেন, এ দুটি বই ইতিহাসের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাইদা খানমকে নিয়ে লেখা বইটিতে অনেক প্রসঙ্গ এসেছে এবং নিরপেক্ষভাবে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরীর বক্তব্যে উঠে আসে তাঁর নিজের ছাত্রাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সাইদা খানমকে গ্রন্থাগারিক হিসেবে দেখা এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর লেখা প্রকাশের স্মৃতিকথা।

আলোকচিত্রী পাভেল রহমান বলেন, ‘সংবাদের আলোকচিত্রীদের কাছে মুহূর্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবতার নিরিখে সেই মুহূর্ত ধরে রাখা আমাদের পুরুষ আলোকচিত্রীর জন্যই এ দেশে কিছুদিন আগেও ছিল প্রতিকূল। কিন্তু সাইদা খানম বহু আগে সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দেখিয়েছেন।’ আলোকচিত্রী মুনিরা মোরশেদও সাইদা খানমের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করেন।

আরও পড়ুন

এ ছাড়াও সাইদা খানমের রচনা সংগ্রহ করে বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তাঁর ভাগনি সারা ফাতিমা। এ সময় উঠে আসে সাইদা খানমের আগের প্রজন্মেও তাঁদের পরিবারের নারীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কথা। শত বছর আগেও পূর্বসূরিরা বহু ভাষায় দক্ষ ছিলেন। আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজ বলেন, পূর্ববঙ্গ এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশে আলোকচিত্রের ভিত্তি তৈরি করেছেন, এমন ১৩৬ জনের তালিকা পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন সাইদা খানম।

৩০ বছর বয়সে তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেসব দুর্লভ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি রচনা করেছেন ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’। এ ছাড়া তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’ ও ‘উপন্যাস ত্রয়ী’ উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। সৃষ্টিশীল আলোকচিত্রী হিসেবে সাইদা খানম ২০১৯ সালে একুশে পদক পান। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট প্রয়াত হন বাংলাদেশের কিংবদন্তি নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম।