শিশুদের নাশতার পর প্রশিক্ষণ-উঠান বৈঠকও শুরু

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ প্রকল্পে শিশুদের নাশতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সমালোচনার মুখে তা আবার চালু হয়। একইভাবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরসহ দুটি সংস্থার ছয়টি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, আপ্যায়ন ব্যয় গত জুলাই থেকে স্থগিত ছিল। কিন্তু এখন তা আবার চালু করা হয়েছে।

গত ১৯ অক্টোবর ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব: ব্যয় কমাতে শিশুদের নাশতা বন্ধ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ২০ অক্টোবর শিশুদের নাশতা আবার চালু করা হয়।

একই প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়টির অধীন দুটি সংস্থার অপর দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক গত জুলাই থেকে বন্ধ থাকার তথ্য উঠে এসেছিল।

এগুলো হলো—মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প’ এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’।

আইজিএ প্রকল্পের মূল কার্যক্রম প্রশিক্ষণ। তথ্য আপা প্রকল্পের একটি অংশ উঠান বৈঠক। ১ নভেম্বর এক চিঠিতে দুটিসহ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মোট ছয়টি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ও আপ্যায়ন ব্যয় চালুর নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

আইজিএ প্রকল্পের প্রশিক্ষণের নতুন ব্যাচ ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। তথ্য আপা প্রকল্পের উঠান বৈঠক শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। এই তথ্যের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন আইজিএ প্রকল্পের পরিচালক মো. তরিকুল আলম ও তথ্য আপা প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. লোকমান হোসেন।

তবে আইজিএ প্রকল্পের প্রশিক্ষকদের ভাতা ও তথ্য আপা প্রকল্পের তিন সেবা কর্মকর্তার উঠান বৈঠক বাবদ ভাতা এখনো বন্ধ রয়েছে।

অর্থ বিভাগের চিঠি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে আপ্যায়ন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় ও দেশীয় প্রশিক্ষণ সংরক্ষণের নির্দেশনা শিথিল করা হয়েছে। এসব খাতে বরাদ্দ করা সমুদয় অর্থ ছাড়ে সম্মতি দেওয়া হলো। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন-সংক্রান্ত নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।

নির্দেশনা শিথিল করা অপর চারটি প্রকল্প হচ্ছে—অ্যাকসেল্যারেটিং প্রটেকশন ফর চিলড্রেন (ভ্রমণ ব্যয়), ইনভেস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট ফর ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (প্রশিক্ষণ), তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন (প্রশিক্ষণ, আপ্যায়ন ও ভ্রমণ ব্যয়) এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বিনির্মাণ (প্রশিক্ষণ)।

আরও পড়ুন

আইজিএ প্রকল্প

৫৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল মেয়াদে আইজিএ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো ৩ লাখ ৮১ হাজারের বেশি সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তাঁরা আয় করতে পারেন।

প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ নারী আয় করছেন। বিষয়টি নিয়ে ‘প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারছেন না ৮৯ শতাংশ নারী’ শিরোনামে গত ২১ অক্টোবর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পে কারা প্রশিক্ষণ নেবেন, তা বাছাইয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয় না। তাই সত্যিকার অর্থে আগ্রহী অনেক নারী প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া ভালো প্রশিক্ষণ উপকরণ না দেওয়ারও অভিযোগ আছে।

প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলায় ১৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের ফ্যাশন ডিজাইন, বিউটিফিকেশন, মাশরুম চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট, মৌচাষ, ফুড প্রসেসিং, কম্পিউটার–মুঠোফোন সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং, মোটর ড্রাইভিং ইত্যাদি ট্রেডে (বিষয়) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একেকটি ট্রেডে ২৫ থেকে ৪৫ জন করে অংশ নেন। তিন মাসের (৬০ কার্যদিবস) প্রশিক্ষণে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয় প্রশিক্ষণার্থীদের।

আরও পড়ুন

উপজেলা পর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ গত জুলাইয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে ১৭তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ মাঝপথে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আবার প্রশিক্ষণ শুরুর নির্দেশনা পেয়েছেন। যে ব্যাচটি অর্ধেক সময় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, তাদের প্রশিক্ষণ চলতি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার শুরু হয়েছে। সকাল-বিকেল দুই বেলা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাচটির প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষ করা হচ্ছে। নতুন ১৮তম ব্যাচ শুরু হয়েছে ২০ নভেম্বর।

প্রকল্পটির প্রশিক্ষকেরা কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ ভাতা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া নতুন নির্দেশনায় তাঁদের বিষয়ে অর্থছাড় হয়নি।

তথ্য আপা প্রকল্প

তথ্য আপা প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ৫৪৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য এক কোটি সুবিধাবঞ্চিত নারীকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পর্কে ক্ষমতায়ন করা।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা, নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ, কৃষিসহ সরকারি তথ্য পাওয়ার অধিকার ছাড়াও বিভিন্ন সচেতনতামূলক তথ্য জানানো হয় প্রকল্পের উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নারীদের। একেকটি বৈঠকে সাধারণত ৫০ জন নারী অংশ নেন। এর জন্য তাঁরা ১০০ টাকা ভাতা ও নাশতা পান।

আরও পড়ুন

গত জুলাই থেকে উঠান বৈঠক বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহ থেকে তা আবার চালু হয়েছে।

তথ্য আপা প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. লোকমান হোসেন বলেন, উঠান বৈঠক আবার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে বৈঠকের দিন ঠিক করছে।

লোকমান হোসেন আরও বলেন, উঠান বৈঠকে যে নারীরা অংশ নেবেন, তাঁদের ভাতা ও নাশতা আগের মতোই বরাদ্দ থাকবে। উঠান বৈঠক পরিচালনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বাইরের একজন বক্তা, প্রকল্পের তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও দুজন তথ্যসেবা সহকারী থাকেন। তাঁরা আগে সম্মানী ভাতা পেতেন। ইউএনও ও বাইরের বক্তা আগের মতোই যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ১ হাজার ২০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। কিন্তু বাকি তিনজনকে এখন আর ভাতা দেওয়া হবে না। ডিসেম্বরে বাজেট সংশোধন হলে তাঁদের ভাতার বিষয়টি যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বকেয়া ভাতাসহ তাঁরা নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে ভাতা পেতে পারেন।

আশাশুনি উপজেলায় তথ্যসেবা কর্মকর্তা বা ‘তথ্য আপা’ রিপা শাহরিন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় তাঁর স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন তথ্যসেবা সহকারী সোহানা নাজনীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি উঠান বৈঠকে তথ্য আপা ১ হাজার টাকা ও তথ্যসেবা সহকারী দুজন ৭৫০ টাকা করে ভাতা পেতেন। এখন তা বন্ধ থাকবে বলে তিনি জেনেছেন।

আরও পড়ুন