চার মাসে স্টারলিংকের গ্রাহক ২ হাজারের কম

স্টারলিংকছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের যাত্রার পাঁচ মাস পার হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দুই হাজারের কম ছিল। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক হাজারের বেশি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে বাংলাদেশের বাজার ধরার চেষ্টায় ছিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। সে সময় পরীক্ষামূলক কিছু কাজও হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

গত বছর ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু করতে বলেছিলেন। সে অনুযায়ী গত ২০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে স্টারলিংক যাত্রা শুরু করে।

প্রযুক্তিভিত্তিক অলাভজনক গণমাধ্যম রেস্ট অব ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে স্টারলিংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম তাদের কার্যক্রম শুরু করে। আফ্রিকার ২০টির বেশি দেশে স্টারলিংক রয়েছে। কেনিয়াতে স্টারলিংক চালু হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। ২০ মাসে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৬৬। অন্যদিকে নাইজেরিয়ায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্টারলিংকের সক্রিয় গ্রাহক ছিল সাড়ে ৫৯ হাজারের বেশি। দেশটিতে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে।

স্টারলিংক যেসব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে এসেছে, সে তুলনায় গ্রাহক বেশি না।
আমিনুল হাকিম, আইএসপিএবির সভাপতি
আরও পড়ুন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ মাসিক নিয়মিত সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে স্টারলিংকের গ্রাহক সংখ্যা, কার্যক্রমসহ নানা দিক উঠে আসে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর কমিশনের ওই বৈঠকে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্টারলিংকের গ্রাহক সংখ্যা ১ হাজার ৮৬২। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১ হাজার ২৫১ জন।

স্টারলিংক কালিয়াকৈরে দুটি, যশোর ও রাজশাহীতে একটি করে গেটওয়ে স্থাপন করেছে। এ ছাড়া সৈয়দপুর, কক্সবাজার, সিলেট ও কুমিল্লায় গেটওয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে স্টারলিংক আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টারলিংক যেসব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে এসেছে, সে তুলনায় গ্রাহক বেশি না।’

বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভায় আলোচনায় বলা হয়, আইনানুগ আড়ি পাতা নিয়ম মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) স্টারলিংক যে ব্যবস্থা (টুল) সরবরাহ করেছে, তা আশানুরূপ কাজ করছে না। বিষয়টি নিয়ে এনটিএমসির সঙ্গে স্টারলিংকের আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন

স্টারলিংক নিয়ে আরও আলোচনা

রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) গাইডলাইনের অন্যতম শর্ত ছিল আইনানুগ আড়ি পাতার সুযোগ থাকতে হবে। দেশের সব টেলিযোগাযোগ সেবাদাতাদের এই শর্ত মেনে চলতে হয়। স্টারলিংকও সে শর্ত মেনে বাংলাদেশে এসেছে।

বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভায় আলোচনায় বলা হয়, এই আইনানুগ আড়ি পাতা নিয়ম মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) স্টারলিংক যে ব্যবস্থা (টুল) সরবরাহ করেছে, তা আশানুরূপ কাজ করছে না। বিষয়টি নিয়ে এনটিএমসির সঙ্গে স্টারলিংকের আলোচনা চলছে।

স্টারলিংক স্থাপিত আর্থ স্টেশন এবং দেশীয় আইআইজি অপারেটরের মাধ্যমে বাংলাদেশি গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা প্রদান হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা ও পর্যবেক্ষণের জন্য বিটিআরসি গত মাসে টুল সরবরাহের জন্য স্টারলিংককে অনুরোধ করে। এর জবাবে স্টারলিংক বিটিআরসিকেও এনটিএমসির মতো একই টুল সরবরাহ করতে পারবে বলে জানায়। তবে বিটিআরসি বলছে, এনটিএমসি ও কমিশন যে উদ্দেশ্যে স্টারলিংকের কাছে মনিটরিং টুল চেয়েছে, তা পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করছে সংস্থা দুটি।

স্টারলিংক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যান্ডউইডথ নিতে চায়। তারা বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) ও আনফিল্টারড আইপি (নিয়ন্ত্রণহীন ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে গত আগস্টে বিটিআরসিকে চিঠি দেয়।
আরও পড়ুন

বিটিআরসি আরও বলেছে, স্টারলিংকের যেসব বিদেশি গ্রাহক (রোমিং) বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তাদেরকে গাইডলাইনের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থাপিত গাউন্ড স্টেশন বা পপের মাধ্যমে সেবা প্রদান করার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে না, যা স্টারলিংকের কাছ থেকে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

স্টারলিংক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যান্ডউইডথ নিতে চায়। তারা বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) ও আনফিল্টারড আইপি (নিয়ন্ত্রণহীন ইন্টারনেট সংযোগ) ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে গত আগস্টে বিটিআরসিকে চিঠি দেয়।

এ বিষয়ে বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে বলা হয়, বাণিজ্যিকভাবে আইপিএলসি ব্যবহার ও বিদেশি গ্রাহককে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি অপারেটর থেকে আনফিল্টারড আইপি সেবাসংক্রান্ত বিষয় গাইডলাইনে নেই।

আরও পড়ুন