গণসমাবেশে যোগ দেওয়া বিএনপির ৫০০ নেতা-কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ

গতকাল গণসমাবেশের পর আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা। দুপুরে বরিশালের একটি রেস্তোরাঁয়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে গতকাল শনিবার গণসমাবেশে আসার পথে বিভাগের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে গণসমাবেশ থেকে ফেরার পথেও বহু স্থানে হামলা হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আজ রোববারও হামলা ও তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন।

আজ দুপুরে বরিশালের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এমন অভিযোগ করেন। গণসমাবেশ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সহাসচিব হাবিব উন নবী খান সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।

বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সব অভিযোগ মিথ্যা; বরং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনী গৌরনদীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। মিথ্যা অভিযোগ করা বিএনপির মজ্জাগত অভ্যাস। সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি যে মিথ্যাচার করেছে, তা নজিরবিহীন। মানুষ এগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হওয়ার দাবি করে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন এই সংবাদ সম্মেলন চলার মধ্যে খবর পেয়েছি, ঝালকাঠির মোল্লারহাট এলাকায় আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। কয়েকজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া এলাকাটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। এখানে আমাদের দলের নেতা ইশরাকের গাড়িবহরে হামলা করে অনেক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মারধর করে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির আরও চার নেতার গাড়ি ভাঙচুর করে তাঁদের সমাবেশ আসতে না দিয়ে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবার ইশরাক হোসেনকে প্রধান আসামি করে শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গৌরনদী থানায় মামলা করা হয়েছে।’

কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি নেতা জাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেখানে (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) এমন শক্তিশালী মানুষ আছেন, যাঁদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে এত বেশি আত্মীয়তা যে তাঁদের কাছের মানুষ ছাড়া সত্যিকারার্থে তাঁরা অন্য কাউকে মাঠে নামতে দেন না।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে হাবিব উন নবী খান জানান, গৌরনদীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলার পর ইশরাকসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অথচ ইশরাকের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। সেখানে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক চলছে। এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা থেকে গণসমাবেশে আসা বিএনপি-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও তাঁদের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আজ দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। গতকাল বিকেলে গণসমাবেশ শেষে ফেরার সময় বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ভোলার চরফ্যাশনে যুবদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। গণসমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে ভোলা জেলায় গতকাল রাত ১১টার দিকে লঞ্চঘাটে যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে সমাবেশের দুই দিন আগে জেলা বিএনপির অফিস ও কলাপাড়ায় বিএনপির অফিস ভাঙচুর করা হয়।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খান মোটরসাইকেলবহর নিয়ে বরিশালে আসার পথে পটুয়াখালীতে হামলা করে তাঁকে আহত করা হয়। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সমাবেশে বিএনপির দুই কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দেন হাবিব উন নবী। এর মধ্যে একজন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং একজন ট্রলার থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে মারা যান।

বরিশালের গণসমাবেশকে ‘জনতার বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটির নেতারা বলেন, গণসমাবেশে যাতে উপস্থিতি কম হয়, সে জন্য গণপরিবহন বন্ধ, প্রান্তিক পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-হুমকিসহ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সব বাধা উপেক্ষা করে গতকাল লাখো মানুষ গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তৃণমূলের মানুষের এই মনোবল হবে ভবিষ্যতের আন্দোলন-সংগ্রামের বড় শক্তি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।