‘ঢাউস’ কমিটির পরও চবি ছাত্রলীগে অসন্তোষ কেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের ‘ঢাউস’ কমিটি দেওয়ার পরও নেতা-কর্মীদের সন্তুষ্ট করা যায়নি। যার প্রতিক্রিয়ায় পদবঞ্চিতরা ৩৫ ঘণ্টা ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে ক্ষোভ দেখান।
গত রোববার মধ্যরাতে প্রথমে ৩৭৬ সদস্যর চবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। দেশের আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এত সংখ্যক সদস্য নেই বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।
এত বড় কমিটির পরও চবি ছাত্রলীগে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রোববার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন।
পদবঞ্চিতদের ডাকা অবরোধে ৩৫ ঘণ্টা ক্যাম্পাস অচল থাকে। অবরোধ চলাকালে গত সোমবার সকালে ক্যাম্পাসগামী শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করা হয়। ফলে সোম ও মঙ্গলবার বন্ধ থাকে শাটল ট্রেন। বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস। এ দুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
চবি ছাত্রলীগের কমিটির আকার এত বড় হওয়া সম্পর্কে সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চবিতে অনেক নেতা-কর্মী পদের আশায় ছিলেন। যে কারণে কমিটিতে পদ বেড়েছে।’
চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে অনেক দিন ধরেই কমিটি হয়নি। তাই ৪২৫ সদস্যর কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে যাঁরা স্থান পাননি, তাঁরাই অবরোধ করেছেন। তবে এটা কাম্য নয়। সাংগঠনিক ঝামেলা আলোচনার মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবেই সমাধান করা উচিত।’
৩৭৬ সদস্যের কমিটি
চবি শাখা ছাত্রলীগের ৩৭৬ সদস্যর কমিটিতে সহসভাপতি ৬৯ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১১ জন। সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন। দপ্তর সম্পাদক ১ জন। উপ-দপ্তর সম্পাদক ৬ জন।
অর্থবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপ অর্থ সম্পাদক ৬ জন। সহসম্পাদক ৪৯ জন। গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ১ জন। উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৬ জন।
শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ১ জন। উপশিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ৬ জন। সমাজসেবা সম্পাদক ১ জন। উপসমাজসেবা সম্পাদক ৬ জন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১ জন। উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক ৬ জন।
পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ৬ জন। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ১ জন। উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ৫ জন।
তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপতথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ৫ জন। ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ৬ জন।
ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ৬ জন। কর্মসংস্থান সম্পাদক ১ জন। উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ৬ জন। মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ১ জন। উপমানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক ৫ জন। সদস্য ২১ জন।
চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা।
আরেকটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা।
ঘোষিত কমিটিতে নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরাই মূলত অবরোধ ডেকে ক্যাম্পাস অচল করেন। তাঁরা কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান।