মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা

পুরুষের তুলনায় দেশের নারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী বেশি। কিন্তু সেবাগ্রহণে নারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছেনপ্রতীকী ছবি

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে বাংলাদেশের নারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছেন (২৪ শতাংশ)। এ ক্ষেত্রে নারী–পুরুষের ব্যবধানও দেশে অনেকটা বেশি (৪০ শতাংশ); যদিও নারীরা ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ভালোই জানেন, এমনকি তাঁদের ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহ পুরুষের চেয়ে বেশি। এ–সংক্রান্ত সচেতনাতেও পুরুষের কাছাকাছি তাঁরা।

এদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের এ পিছিয়ে থাকার বড় কারণ শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাব।

জিএসএমএ বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মুঠোফোনের মালিকানায় নারীরা পিছিয়ে আছেন। বিশেষ করে অস্বচ্ছল, পড়াশোনা না জানা, গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা বা বিশেষভাবে সক্ষম নারীরা আরও বেশি পিছিয়ে আছেন।

মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) চলতি মাসে ‘দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১২টি দেশের তথ্য প্রকাশ করেছে জিএসএমএ। দেশগুলো হলো মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো।

জিএসএমএ গত বছর এসব দেশে জরিপ চালায়। জরিপে ভারত বাদে বাকি ১১টি দেশে ১৫ বছর ও এর বেশি বয়সের এক হাজার নারী ও পুরুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ভারতে দুই হাজার জনের ওপর জরিপ চালানো হয়।

আরও পড়ুন

জিএসএমএ বলেছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে নারী–পুরুষের ব্যবধান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি, ৪০ শতাংশ। ভারতে এ ব্যবধান ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশে মুঠোফোনের মালিকানা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী–পুরুষের ব্যবধান সামান্য কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারী ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। এরপরও তাঁরা তা ব্যবহার করেন না। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাবের কথা উঠে এসেছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ছাড়া সামর্থ্য না থাকাও বড় একটি কারণ।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় বাধা হিসেবে সামর্থ্যের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, মুঠোফোনের দাম বেশি। ইন্টারনেটের বাড়তি দামও বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিশেষত বাংলাদেশ, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও উগান্ডায় মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ডেটা প্যাকেজের বাড়তি দাম বড় একটি সমস্যা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের নারীরা ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। কিন্তু এরপরও তা ব্যবহার করতে পারছেন না। এটা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, সরকারের সেবাগুলো সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এসব সেবা গ্রহণ করা থেকে নারীরা পিছিয়ে পড়বেন।

অধ্যাপক মইনুল হোসেন আরও বলেন, মুঠোফোনের মালিকানা, বিশেষ করে স্মার্টফোনের মালিকানায় দেশের নারীরা বেশ পিছিয়ে। পুরোপুরি ডিজিটাল নির্ভর হয়ে উঠতে হলে এসব ব্যবধান কমাতে হবে।

আরও পড়ুন

মুঠোফোনের ব্যবহার

প্রতিবেদনে জিএসএমএ বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মুঠোফোনের মালিকানায় নারীরা পিছিয়ে আছেন। বিশেষ করে অস্বচ্ছল, পড়াশোনা না জানা, গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা বা বিশেষভাবে সক্ষম নারীরা বেশি পিছিয়ে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনের মালিক। অর্থাৎ মালিকানায় নারী–পুরুষের ব্যবধান ২০ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও সর্বশেষ জরিপের আগের বছর (২০২২) এ ব্যবধান ২১ শতাংশ ছিল। এ ছাড়া দেশে যত পুরুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা তার অর্ধেক।

আরও পড়ুন

ইন্টারনেট ব্যবহার

দেশে নারীদের অনেকে অন্যের মুঠোফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আবার স্মার্টফোন আছে এমন নারীদের অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। জিএসএমএ বলছে, দেশের ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এ হার ভারতে ৫৩ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৯ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৩ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ।

মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে জানেন দেশের ৩৭ শতাংশ পুরুষ। নারীর মধ্যে এ হার ২১ শতাংশ। তাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য। অন্যদিকে, পুরুষের তুলনায় দেশের নারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী বেশি। জিএসএমএ বলছে, দেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীর ৫৩ শতাংশ ও পুরুষের ৪৬ শতাংশ আরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান।

তবে বৈশ্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ–সংক্রান্ত নারী–পুরুষের ব্যবধান গত বছর ১৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নেমেছে।

আরও পড়ুন

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা

জিএসএমএ বলছে, মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে মানুষের মধ্যে কম সচেতনতা, মুঠোফোন সহজলভ্য না হওয়া, শিক্ষার হার ও ডিজিটাল দক্ষতা কম থাকা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।

এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় বাধা হিসেবে সামর্থ্যের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, মুঠোফোনের দাম বেশি। ইন্টারনেটের বাড়তি দামও বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিশেষত বাংলাদেশ, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও উগান্ডায় মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ডেটা প্যাকেজের বাড়তি দাম বড় একটি সমস্যা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ২৪ শতাংশ নারী এবং ১৫ শতাংশ পুরুষ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ডাটা প্যাকেজের বাড়তি দামের বিষয়টি চিহ্নিত করেছেন।

প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও কেনিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার নারীরা আরও বেশি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছে জিএসএমএ।

আরও পড়ুন

যেসব কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার

বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই অনলাইন কল, ভিডিও কল এবং অনলাইনে বিনোদনের জন্য মুঠোফোনে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন।

পুরুষের ৫৫ শতাংশ ও নারীর ৪৫ শতাংশ অনলাইনে খবর পড়েন। পুরুষের ২৩ ও নারীর ১২ শতাংশ চাকরি ও ব্যবসা–সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে খুঁজে থাকেন। তবে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য খোঁজায় ইন্টারনেট সবচেয়ে কম ব্যবহার করা হয়।

জিএসএমএ বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে নেতিবাচক ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি অভিযোগ করেন। অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে দক্ষ, এমন পুরুষ দেশে ৭৪ শতাংশ ও নারী ৬৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন