ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিভিউ শুনানি ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে। সাত বিচারপতির দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনার আবেদন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ শুনতে পারেন কি না, সেদিন শুনানিতে এমন প্রশ্নে ওঠে। এমন প্রক্ষাপটে ১৬ নভেম্বর আপিল বিভাগ ওই প্রশ্নে জ্যেষ্ঠ আট আইনজীবীর মতামত শোনেন। এরপর আপিল বিভাগ এ বিষয়ে ২৩ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। একই সঙ্গে পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়।
পরে ২৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন, আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রিভিউ শুনতে পারবেন (কমপিটেন্ট)। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহাল রেখে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
আগের ধারাবাহিকতায় রিভিউ আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্রমানুসারে রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ডাকা হয়। বিষয়টি উঠলে আদালত পরে শুনবেন জানিয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। এর বৈধতা নিয়ে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে আপিল খারিজ করে রায় দেন।
২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন।
এস কে সিনহার এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। কেউ কেউ তখনকার প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যদিকে এ রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তাঁর পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছায়। পরে তাঁর পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।