বিরল রোগ : একটি ওষুধের দাম ২২ কোটি টাকা

রাইয়ান মোস্তাকিন দুই বছর বয়সে খবরের শিরোনাম হয়েছিল একটি ওষুধ নেওয়ার কারণে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রাইয়ানের শরীরে ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিসের এই ওষুধ কিনতে চাইলে বাংলাদেশি ২২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে রাইয়ান ওষুটি পেয়েছিল লটারিতে।

মানিকগঞ্জের মো. রফিকুল ইসলাম ও রিনা আক্তারের সন্তান রাইয়ান মোস্তাকিন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ওর জন্ম। রাইয়ানের মা ও দাদি খেয়াল করেন শিশুটি কিছুটা অস্বাভাবিক। হাত–পা খুবই নরম, পেশি বলে কিছুই নেই।

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জ ও সাভারে একাধিক চিকিৎসক দেখানোর পর নয় মাস বয়সে তাকে আনা হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে। শনাক্ত হয় স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি বা এসএমএ নামের বিরল রোগ। এটি জিনগত রোগ। বিরল রোগের ওষুধ দুনিয়ায় কোথাও সহজে পাওয়া যায় না।

ছয়টি শিশুর হয়ে তিনি লটারিতে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভাগ্যবান রাইয়ান।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু স্নায়ুরোগ বিভাগ) জুবাইদা পারভীন

এসএমএ রোগীর চিকিৎসায় তিনটি স্বীকৃত বিকল্প উপায় রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি রোশের সিরাপ, বায়োজিনের ইনজেকশন ও নোভার্টিসের জিন থেরাপি (ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়)।

আরও পড়ুন

নোভার্টিসের ওষুধটির নাম জোলজেনএসএমএ। নোভার্টিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে বৈশ্বিক কর্মসূচি ‘গ্লোবাল ম্যানেজড অ্যাক্সেস প্রোগ্রাম’–এর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের রোগীদের এই অতি মূল্যবান ওষুধটি দেওয়া হতো। এটা লটারির মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রোগীদের হয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকেরা লটারিতে অংশ নিতেন।

আরও পড়ুন

শিশুর বয়স হবে দুই বছরের কম এবং জিন পরীক্ষার মাধ্যমে এসএমএর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া সেই দেশের শিশুরাই ওষুধটি পাবে যে দেশে ওষুধটির অনুমোদন নেই। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নোভার্টিস এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। ওই বছর পর্যন্ত ৪০টি দেশের ৩০০ এসএমএ শিশু ওষুধটি বিনা মূল্যে পেয়েছিল। রাইয়ান তাদের একজন এবং লটারির মাধ্যমে পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি শিশু।

এসএমএ রোগীর চিকিৎসায় তিনটি স্বীকৃত বিকল্প উপায় রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি রোশের সিরাপ, বায়োজিনের ইনজেকশন ও নোভার্টিসের জিন থেরাপি (ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়)।

রাইয়ানের হয়ে লটারিতে অংশ নিয়েছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু স্নায়ুরোগ বিভাগ) জুবাইদা পারভীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছয়টি শিশুর হয়ে তিনি লটারিতে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভাগ্যবান রাইয়ান।

হাসপাতাল ও নোভার্টিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আরও একটি শিশু এই ওষুধটি পেয়েছে। শিশুটির বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ওষুধটি সমঝোতা মূল্যে কিনেছেন। এই সমঝোতায় সহায়তা করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল।

গত ২৩–২৪ আগস্ট ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে এসএমএ রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় রাইয়ান এসেছিল তার বাবা–মা ও দাদিকে সঙ্গে নিয়ে। চিকিৎসক ও তার বাবা–মা জানিয়েছেন, জিন থেরাপি পাওয়ার পর শিশুটির অনেক পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে। হাত–পা শক্ত হচ্ছে। সে এখন বসতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর জিনগত ত্রুটি দূর হতে থাকবে, ও স্বাভাবিক হবে।

তবে হাসপাতাল ও নোভার্টিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আরও একটি শিশু এই ওষুধটি পেয়েছে। শিশুটির বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ওষুধটি সমঝোতা মূল্যে কিনেছেন। এই সমঝোতায় সহায়তা করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল।

[প্রথম আলো রোগী ও রোগীর অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে নাম এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।]