গুলি ছোড়ায় কড়াকড়ি, বলপ্রয়োগ বিষয়ে ৫ সুপারিশ পুলিশ সংস্কার কমিশনের

কমিশন নিয়ে পুলিশের প্রস্তাব

  • অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা সাবেক আইজিপির নেতৃত্বে  ১১ জনের পুলিশ কমিশন।

  • থাকবেন ৪ সংসদ সদস্য, ১ নারীসহ আরও ৪ অরাজনৈতিক ব্যক্তি।

  • আইজিপির সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ বছর।

পুলিশফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে পাঁচটি ধাপ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা এবং পুলিশ প্রবিধান, ১৯৪৩ অনুযায়ী বলপ্রয়োগের এই ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি। সুপারিশে পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিশনের তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত দেওয়া হলেও এর কাঠামো নিয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের কমিশন এবং এর কাঠামোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন
উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী বলপ্রয়োগের ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, নাম-ঠিকানা জানা গেছে এমন আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫১। এখন পর্যন্ত ৮২৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে। আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত তিন শ্রেণির প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপেও বলপ্রয়োগের বিষয়টিকে সবার শুরুতে রাখা হয়েছে। ওই সারসংক্ষেপের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত পুলিশ প্রবিধান অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখে ‘ইউজ অব ফোর্সের’ পাঁচটি ধাপ ঠিক করেছে পুলিশ। সংস্কার কমিশন এগুলো তাদের সুপারিশে রেখেছে। ধাপগুলো হলো শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে অবৈধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা, স্বল্প বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং দলগত অস্ত্রের ব্যবহার।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সংঘবদ্ধ জনতা মিছিল, সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করার প্রবণতা দেখালে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে দৃশ্যমানভাবে নিয়োজিত হবেন। পুলিশ সংঘবদ্ধ জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করলে ছত্রভঙ্গ না হয়ে অধিক শক্তি সঞ্চয় করতে থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থায় যেতে পারবে। যদি জনতা মারমুখী আচরণ করে, ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে আঘাত করে আহত করে, তখন ধীরে ধীরে গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান, গ্যাস বা স্মোক ক্যানিস্টার ও লঞ্চার, হ্যান্ড স্টান ক্যানিস্টার, সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল লঞ্চার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শুধু পুলিশ সদস্যদের বা ব্যক্তির আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগের জন্য জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা যাবে। তবে সেই অধিকারও সীমাবদ্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগের ঘটনায় এবার অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন। এ কারণে এ বিষয়টিকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি পুলিশ কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।’ 

সংস্পর্শ ছাড়া বলপ্রয়োগের প্রথম ধাপ

সুপারিশে বলা হয়, মিছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে ও ছত্রভঙ্গ হওয়ার আহ্বান জানালে, পুলিশ সদস্যরা এমনভাবে নিয়োজিত হবেন, যাতে বিক্ষোভকারীরা সহজতম পথে সেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। এই স্তরে এমনভাবে পুলিশ কাজ করবে, যাতে জনতার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মিছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতার কোনো শারীরিক সংস্পর্শ থাকবে না। আরও অধিক শক্তি সঞ্চয় করলে ‘ক্রাউড কন্টোলের’ জন্য স্টিল হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, লেগ গার্ড, আর্মস গার্ড, থাই গার্ড ও গ্যাস মাস্ক পরে জনতার গতিবিধিতে নজর রাখবেন।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ধাপেও থাকবে নিরাপদ দূরত্ব

বলপ্রয়োগের দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে পুলিশের প্রস্তুত করা সুপারিশে বলা হয়, এটি হলো জনতাকে পুলিশ বেআইনি ঘোষণা করার পরও ছত্রভঙ্গ না হয়ে জড়ো হওয়ার প্রবণতা। যদি জনতা পুলিশ সদস্যদের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে, তাহলে রোড ব্লক, ক্লিয়ারিং ওয়েভ ও অফেনসিভ জাম্প কৌশল প্রয়োগ করে জনতার সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব সৃষ্টি করবে। এভাবে পুলিশ শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা অবৈধ জনতার দখলমুক্ত করে নিজেদের আওতায় নিয়ে আসবে।

অবৈধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা

বারবার সমঝোতার চেষ্টা ও সতর্কবাণী উচ্চারণ করার পরও বেআইনি সমাবেশের জনতা সংঘবদ্ধ থাকলে এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার প্রবণতা না দেখালে বলপ্রয়োগের তৃতীয় ধাপ অবলম্বন করা হবে। এ ধাপে বলপ্রয়োগের জন্য যেসব পরিস্থিতির উদ্ভব হতে হবে সেগুলো হলো যদি মিছিল, সমাবেশ করে অনুমোদনহীন এলাকা অতিক্রম করা হয়, যাতে মানুষের জানমাল ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ছত্রভঙ্গ হওয়ার আহ্বান জানানোর পরও জনতা না সরলে এবং জনতার দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধ বা নিবারণের জন্য। কোনো এলাকার নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরে জনতা জোরপূর্বক অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করলে অথবা গ্রেপ্তারকৃত বা আটক অপরাধীদের পালানো প্রতিরোধ বা তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য উচ্ছৃঙ্খল জনতা আক্রমণ করলে এই ধাপে বলপ্রয়োগ করা যাবে।

আরও পড়ুন

এ অবস্থায় ব্যাটন, গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান, গ্যাস, স্মোক ক্যানিস্টার ও লঞ্চার, হ্যান্ড স্টান ক্যানিস্টার, সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল লঞ্চার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করে অবৈধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ বা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ পর্যায়ে অবৈধ জনতাকে সক্রিয়ভাবে বাধা দিতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দলনেতা ও গোলযোগে অন্যান্য উসকানিদাতা অবৈধ জনতাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

স্বল্প প্রাণঘাতী বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার

বিভিন্ন কৌশলে শক্তি প্রয়োগ করেও অবৈধ জনতা ছত্রভঙ্গ না হলে বরং আরও সংগঠিত হওয়ার প্রবণতা দেখিয়ে মারমুখী আচরণ করলে, ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটালে এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে আঘাত করে আহত করলে কমান্ডার তাঁর সদস্যদেরসহ অবস্থান নেবেন। জলকামান, আর্মার্ড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। প্রয়োজনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শটগান, এক্সপ্লোসিভ গ্রেনেড ও ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করবেন। পুলিশ সদস্যদের এ পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। জনতার ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশকে একটি চরম ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করতে হবে।

আরও পড়ুন

দলগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেহের বা সম্পত্তি-সম্পর্কিত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হলে সর্বশেষ ধাপে দলগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। বেআইনি জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যর্থ হলে চরম ব্যবস্থা হিসেবে এই ধাপ কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দক্ষ শুটার দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দলগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার জন্য গুরুতর আঘাত এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যেতে পারে। দেহ বা সম্পত্তি-সম্পর্কিত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে এই ধাপে বলপ্রয়োগ করা যাবে। তবে যতক্ষণ আতঙ্ক থাকবে, ততক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে। তবে কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগ করা যাবে না। আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার প্রবণতা দেখলেই শক্তি প্রয়োগের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। এ পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে প্যারা মিলিটারি ও অন্যান্য ফোর্সের সাহায্য নেওয়া যাবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. জারিফ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যেন মানবাধিকার সমুন্নত রেখে সত্যিকারার্থে জনগণের জন্য কাজ করতে পারে—সুপারিশে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশের দেওয়া কিছু প্রস্তাব সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। আবার কিছু প্রস্তাব সংযুক্তি হিসেবে প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

যেমন কমিশন দেখতে চায় পুলিশ

পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ‘পুলিশ কমিশন’ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে বাহিনীটির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে আছে এই কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ কমিশন হিসেবে বিবেচিত হবে। কমিশনের সদস্য হবেন ১১ জন। আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। পুলিশ কমিশনের সদস্যরা স্থায়ী ও খণ্ডকালীন হিসেবে মনোনীত, নির্বাচিত বা নিযুক্ত হবেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে পরামর্শক্রমে চারজন সংসদ সদস্য কমিশনের সদস্য মনোনীত হবেন। চারজনের মধ্যে দুজন সরকারি দলের ও একজন প্রধান বিরোধী দলের এবং একজন অন্য দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে মনোনীত হবেন। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় শ্রেণির সদস্যদের মেয়াদ হবে চার বছর। দ্বিতীয় মেয়াদে কেউ সদস্য হতে পারবেন না।

বাছাই কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা থেকে বাকি চারজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনের সদস্য হবেন। এর মধ্যে একজন আইনজ্ঞ, একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, সমাজবিজ্ঞান বা পুলিশিং বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একাডেমিশিয়ান ও একজন মানবাধিকারকর্মী থাকবেন। তবে চার ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একজন নারী থাকতে হবে। বাকি দুই সদস্য হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইজিপি। আইজিপি কমিশনের সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

আরও পড়ুন

সংস্কার কমিশনের কাছে পুলিশের দেওয়া প্রস্তাবে সদস্যদের যোগ্যতা ও অপসারণের বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও অরাজনৈতিক সদস্যরা নিয়োগের আগে দুই বছরের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, প্রতিনিধি বা জনসেবক হতে পারবে না। দেউলিয়া, ঋণখেলাপি বা কর ফাঁকিদাতা সদস্য হতে পারবেন না। বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং চাকরিতে লাভজনক পদে থাকবেন না, সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক অংশ বা স্বার্থ আছে এমন কোনো সংস্থায় চাকরিরত হবেন না। পাশাপাশি দুর্নীতি বা অন্য কোনো অসদাচরণের কারণে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হলে কিংবা ফৌজদারি অপরাধে কারাদণ্ড ভোগ করলে সদস্য হতে পারবেন না।

এসব প্রস্তাবের বিষয়ে বাহিনীটির সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ নিয়ে যত বিতর্ক, তার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। পুলিশ পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা আগামীর পুলিশ কেমন দেখতে চায়।

আরও পড়ুন

ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ হবে প্যানেল থেকে

সংস্কার কমিশনের কাছে পুলিশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে আরও আছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিয়োগ হবে তিন সদস্যের প্যানেল থেকে। রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্যানেল সুপারিশ করবে পুলিশ কমিশন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি আইজিপি নিয়োগ দেবেন। কর্মকর্তার চাকরির বয়স যত দিনই থাকুক, আইজিপি পদে তিনি সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ তিন বছর থাকতে পারবেন। তা ছাড়া বিশেষায়িত ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং রেঞ্জ ডিআইজি নিয়োগও হবে প্যানেল থেকে।

আইজিপিকে চার কারণে অপসারণ করতে পারবে কমিশন। সেগুলো হলো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে, নৈতিক স্খলন, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা এবং দেউলিয়া বা ঋণখেলাপি বা কর ফাঁকি দিলে।

পুলিশ কমিশনের কার্যাবলি কেমন হবে, পুলিশের প্রস্তাবে তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, কমিশন জাতীয় জননিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করবে। পুলিশসংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও প্রবিধি প্রস্তুত, সংশোধন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হলে তার খসড়া তৈরি করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পুলিশের আইনগত বলপ্রয়োগের পরিধি ও কার্যক্রম নির্ধারণ করবে। পুলিশের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রমিতকরণের কাজ করবে কমিশন।

আরও পড়ুন

কমিশনের তিন সদস্যের একটি অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। এই কমিটি মূলত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রচলিত যে অভিযোগ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশকে কর্তৃত্ব দিতে হবে, জবাবদিহিও থাকতে হবে। এ জন্য কাঠামোগত ও আইনগত সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন করা দরকার। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য এবং অরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই কমিশন গঠন করা গেলে পুলিশ পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষমতায় ভারসাম্য আসবে।