বুয়েটে স্থগিত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা যেভাবে নেওয়া হবে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এতে বুয়েটে একাডেমিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার বাকি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাগুলো স্থগিত এবং শিক্ষার্থীদের বর্জন করা পরীক্ষাগুলো আবার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চাওয়া ও সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

একাডেমিক কাউন্সিলের গতকালের সভার কার্যবিবরণী আজ রোববার প্রকাশ করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এতে বুয়েটের উপাচার্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি সত্যপ্রসাদ মজুমদার এবং রেজিস্ট্রার ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব মো. ফোরকান উদ্দিন সই করেছেন।

সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তগুলো হলো স্নাতক পর্যায়ে (জুলাই ২০২৩ টার্মের) অবশিষ্ট ফাইনাল পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হলো এবং ৩০ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিলের পরীক্ষাগুলোর তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে আবার নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তবে এই পরীক্ষাগুলোয় কোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকলে তিনি আবার পরীক্ষা দিতে চান কি না, সে বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকবে। আবার না দিতে চাইলে কিংবা নির্ধারিত সময়ে এ বিষয়ে মতামত না দিলে ওই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করা পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেড দেওয়া হবে। তবে তাঁরা আবার পরীক্ষা দিতে চাইলে পুনর্নির্ধারিত তারিখে নেওয়া পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেড দেওয়া হবে।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ের প্রতি ব্যাচের শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্ব স্ব বিভাগের প্রধানেরা প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিভাগীয় শিক্ষকদের নিয়ে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলোচনা করে পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব প্রণয়ন করে পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করবেন এবং কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। সব বিভাগের সব ব্যাচের পরীক্ষার পুনর্নির্ধারিত তারিখের প্রস্তাব পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বিভাগের প্রধানেরাসহ শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে বুয়েটের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ডিন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করে আলোচনা করবেন এবং প্রস্তাব প্রণয়ন করবেন। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত প্রস্তাব একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

আরও পড়ুন

ছাত্রলীগের এক নেতার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। তবে বুয়েটে এখনো আদালতের এ–সংক্রান্ত আদেশের কপি (অনুলিপি) পৌঁছায়নি। গতকালের সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী এ বিষয়ে বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে।

ঈদুল ফিতরের আগে গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করেন। বিষয়টি কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সমর্থনে তখন বুয়েটের ১৮, ২০ ও ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন।

আরও পড়ুন

১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের ওই আদেশের পর বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ৪ এপ্রিল বুয়েটে ছুটি শুরু হয়। গত মঙ্গলবার এই ছুটি শেষ হয়। ক্যাম্পাস খোলার এক দিন আগে বুয়েটের ডিএসডব্লিউ মো. মিজানুর রহমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে।

গত বুধবার পরীক্ষা শুরু হলেও ক্লাস ছিল না। ওই দিন বুয়েটের ১৮ ও ২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। ১৮ ব্যাচের কেউই পরীক্ষায় অংশ নেননি, ২১ ব্যাচের পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র আটজন। পরদিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৯ ও ২২ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। সেদিন এই দুই ব্যাচের কেউই পরীক্ষায় অংশ নেননি। আজ ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় মাত্র দুজন অংশ নেন।