ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়ে ফজলুর রহমান বললেন, ‘স্লিপ অব টাং হয়ে যেতে পারে’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান ক্ষমা চাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে ব্রিফ করা হয়। আজ সোমবার সকালেছবি: প্রথম আলো

আদালত অবমাননার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। তাঁর ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘আল্লাহর পরে আপনাদের সম্মান। হয়তো আমার স্লিপ অব টাং হয়ে যেতে পারে। আমিও মানুষ। আমার জীবনে আর এ রকম হয়নি। আমি ক্ষমা চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার আদালত অবমাননার দায় থেকে ফজলুর রহমান অব্যাহতি দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সম্প্রতি টেলিভিশনের এক টক শোয় ফজলুর রহমান বলেছিলেন, তিনি এ ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এমন মন্তব্যের জন্য আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে তাঁর একাডেমিক আর বার কাউন্সিল সনদ নিয়ে সশরীর হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আজ তাঁর হাজিরার দিন ধার্য ছিল।

শুনানির শুরুতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরা হয়। ফজলুর রহমানের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আসামির বক্তব্য তুলে ধরতে চান। তখন ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানের কাছ থেকে বক্তব্য শুনতে চান।

আরও পড়ুন

‘আমি এইভাবে বলি নাই’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ফজলুর রহমানের কাছ থেকে শোনার দরকার আছে। যদি তিনি বলেন, এভাবে বলতে চাননি। তাহলে এক রকম। আর যদি বলেন, তিনি বলেছেন এবং আরও বলবেন; তাহলে আরেক ধরনের বিবেচনা।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ফজলুর রহমান আপনি কাইন্ডলি বলবেন, আপনি এই কথা বলেছেন কিনা।’

তখন ফজলুর রহমান বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি এইভাবে বলি নাই।’

তখন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ট্রাইব্যুনালের ওপর ফজলুর রহমানের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। এ ধরনের মন্তব্যের জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তিনি সত্যিই এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত।

আরও পড়ুন

যা বললেন ট্রাইব্যুনাল

তখন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, ‘উনাকে (ফজলুর) তো আমরা চিনি। তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের ফ্যামিলিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। রাতে রুম ছেড়ে দিয়েছি। রাতে খায়িয়েছি। কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে, বলে দিয়েছি। আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধা) অবস্থান সুপিরিয়র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে সহজে আনবেন না। জুডিশিয়ারিকে আপনারা গাইড করবেন।’

বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন।

ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘আল্লাহর পরে আপনাদের সম্মান। হয়তো আমার স্লিপ অব টাং হয়ে যেতে পারে। আমিও মানুষ। আমার জীবনে আর এরকম হয় নাই। আমি ক্ষমা চাই।’

আরও পড়ুন

এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ফজলুর রহমান কোর্টকে ম্যালাইন করার জন্য এ রকমের কথা বলবেন, এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন। জুডিশিয়ারি যদি ফাংশন না করে, তাহলে তো দেশ বর্বর হয়ে যাবে।

পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘অল দ্য বেস্ট। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।’

আরও পড়ুন