রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সিপিজেসহ ২১ সংগঠনের খোলা চিঠি

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম
ফাইল ছবি

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে খোলা চিঠি দিয়েছে ২১টি আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগঠনগুলোর মধ্যে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস রয়েছে।

সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ই-মেইলে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে চিঠির অনুলিপি (সিসি) ই-মেইলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন সিপিজের ওয়েবসাইটে গতকাল রোববার চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে সরকারি দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করার মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করেন। মূলত, এ জন্য তিনি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। তিনি ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির আওতায় তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। অবিলম্বে তাঁকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হেনস্তা-নির্যাতনের শিকার হন। তাঁকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে তাঁকে শত বছরের পুরোনো ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি সাত দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান।

আরও পড়ুন

চিঠিতে বলা হয়, তদন্তপ্রক্রিয়া শেষে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে রোজিনা ইসলামের ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

জামিনে মুক্তির পর থেকে রোজিনা ইসলামকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, অযথা বিলম্বের মাধ্যমে তাঁর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তাঁর নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানাতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। মূলত, তাঁকে ভয় দেখাতে এ পদক্ষেপ।

সংগঠনগুলো বলেছে, রোজিনা ইসলামের জামিন শর্তহীন ছিল না। জামিন পেতে তাঁকে পাসপোর্ট জমা রাখতে হয়েছিল। গত বছর আদালত সাময়িকভাবে তাঁর পাসপোর্ট ফেরতের নির্দেশ দেন। তবে বিদেশ যেতে তাঁকে আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

টানা ১৪ মাসের তদন্তের পর গত বছরের জুলাইয়ে এ মামলায় রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ‘নারাজি’ আবেদন করা হয়। পরবর্তী সময়ে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা অধিকতর তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো।

আরও পড়ুন

রোজিনা ইসলামের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতসহ তাঁর মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শনে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সব ধরনের বিচার বিভাগীয় হয়রানি অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিচার বিভাগীয় হেফাজত থেকে তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া, তাঁর কাজের জন্য তাঁকে আরও প্রতিহিংসার নিশানা যাতে করা না হয়, তা–ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিটিতে সই করা অন্য সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমা, ফ্রি মিডিয়া মুভমেন্ট, ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডারর্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস, সাউথ এশিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন।

আরও পড়ুন

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ‘সেরা অদম্য সাহসী’ হিসেবে ২০২১ সালে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের ‘অ্যান্টি-করাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পান তিনি।

আরও পড়ুন