পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য

আলোচকেরা মনে করেন, বাহিনী পরিচালনায় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে কমিশনের পূর্ণ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে (বাঁ থেকে) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। গতকাল ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাহিনীর একাংশের দলীয় আনুগত্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে গত বছর জুলাই–আগস্টে। এই পুলিশকে পুনর্গঠন করে জনবান্ধব ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনকে অপরিহার্য মনে করছেন অংশীজনেরা। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

গতকাল শনিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশীজনদের বক্তব্যে এমন মত উঠে এসেছে। প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এই আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, পুলিশের সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বক্তারা প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের ক্ষমতা, কার্যাবলি নিয়েও আলোচনা করেন। এই কমিশন যাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে না যায়, সেটার ওপরও জোর দেন সবাই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশ্বাস দেন প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশে কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নিশ্চয়তার বিষয়টি থাকবে। তিনি পুলিশ সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করা ব্যক্তির স্বজনদের জানাতে হবে। কাউকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বজনদের না জানালে সেটা হলে গুম হিসেবে গণ্য হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা পুলিশকে একটি নির্মম, অত্যাচারী, পাশবিক এবং দানবীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল। পুলিশে ‘আমার লোক, তোমার লোক’—এই বিষয়টি আওয়ামী লীগ আমলে ভয়াবহ অবস্থায় গিয়েছিল। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, ভুয়া নির্বাচন, দলীয়করণ—সবই করেছে। সবকিছু শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, বাকিরা সেটি ‘কন্টিনিউ’ করেছে।

বিগত সময়ে পুলিশ যে এমন অত্যাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো, সে প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কেউ কেউ করেছে সরকারি দলের আদেশে, সরকারি দলের ইচ্ছাপূরণের জন্য। আর কেউ কেউ করে নিজ স্বভাবে, সে ক্ষমতাশালী হতে চায়, টাকা বানাতে চায়। সরকার তাকে যতটুকু অত্যাচার করতে বলে, তার থেকেও দশ গুণ বেশি করে।’

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে আইনের আওতায় স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তার বিষয়ে জোর দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলে, ‘কাজের ক্ষেত্রে ইনডিপেনডেন্স, ফাংশনাল ইনডিপেনডেন্সটা আমাকে দেন। আমি আগেও বলেছি যে মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে যেন আমার কাছে কোনো নির্দেশনা না আসে। বইতে (আইনে) সবকিছু লেখা আছে। সেই অনুযায়ী পুলিশকে কাজ করতে দেন।’

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ শনিবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠকে
ছবি: প্রথম আলো

 আত্মানুসন্ধানের আহ্বান

পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাহারুল আলম বলেন, গত নভেম্বর থেকে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়টা মোটেই সুখকর নয়। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমাকেও মাঝেমধ্যে শুনতে হয়, “উনি কি আমাদের লোক?”’

রাজনৈতিক সরকারই দেশ চালাবে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘ওনারাই (রাজনৈতিক সরকার) তো আমাদের অভিভাবক। সে জায়গাটায় কেন যেতে পারছি না?’

আরও পড়ুন

অতীতের রাজনীতিকরণের খারাপ দৃষ্টান্তের প্রেক্ষাপটে আইজিপি বলেন, ‘সে ভয় থেকেই আমরা বলি, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করে একটা ইনডিপেনডেন্ট বডির আন্ডারে (স্বাধীন বিভাগের অধীনে) আমাকে নিয়ে যান।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আইজিপি বলেন, মানুষের মধ্যে কতটা ঘৃণা আর ক্রোধ সঞ্চারিত হলে পুলিশ থানা ছেড়ে পালায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ও পুলিশকে পালাতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে কেন জুলাই-আগস্টে (২০২৪) আমাদের পালাতে হলো, কী পরিমাণ ঘৃণার সঞ্চার হয়েছিল মানুষের মধ্যে যে আমরা কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছি গত ১৫ বছর; এই জায়গাটাতে আমার মনে হয়, আত্মানুসন্ধান করি।’

‘দলীয় প্রভাব বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের সংস্কৃতি নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ শুধু ব্যবহৃত হয়েছে বিষয়টি এমন নয়; বরং তারা এটাকে উপভোগ করেছে। এই ক্ষমতা ব্যবহার করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। ফলে কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও জরুরি।

পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের পর এর দায় রাজনৈতিক দল নেয় না বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে সরকারের পরিকল্পনা কী, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অতিরিক্ত ক্ষমতার ব্যবহার এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি অবগত নন। এগুলো মাঠপর্যায়ের পুলিশের দায়। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে কাজ করেছেন—এ কথাও অস্বীকার করা যায় না। এখন দায় কেবল নিচের স্তরের সদস্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা অন্যায় ও অযৌক্তিক।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা। আজ শনিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে
ছবি: প্রথম আলো

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর এখনো প্রশাসনে দলীয় প্রভাব বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এখনো নিয়োগ, পদোন্নতি থেকে শুরু করে কাকে ত্যাগ করা হবে, কাকে ত্যাগ করা হবে না, মামলা-বাণিজ্য, গ্রেপ্তার ও জামিন-বাণিজ্য সবকিছু চলছে।

সংস্কার ও স্বাধীন কমিশনের আওতায় পুলিশকে পরিচালনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা, অন্য নিরাপত্তা সংস্থা এবং নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে না পারলে পুলিশ সংস্কার কেন, কোনো সংস্কারই অর্জিত হবে না।

‘এ কি আমাদের?’

‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ, আওয়ামী পরিবার’ নানান তকমা আছে বলে উল্লেখ করেন পুলিশের সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা। তিনি বলেন, এমন বিভাজিত সমাজে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট (নিয়োগ) পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য দেখা করতে হয়, দেখা করলে অনেক কথার পরেও বা অল্প কথার পরেও “এ কি আমাদের?” সরকারপ্রধানের কাছ থেকে এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রতবোধ করতে হয়।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এত মানুষের মৃত্যুর পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান।

প্রথম আলো-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় প্রণীত ১৬৫ বছরের পুরোনো আইন পুলিশের জন্মসূত্রেই তাকে ‘ইন্সট্রুমেন্ট’ (হাতিয়ার) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুলিশকে যদি প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেওয়া হয়, তবে কখনোই জনসেবামুখী বাহিনীতে পরিণত হবে না। স্বাধীন পুলিশ কমিশন ছাড়া সত্যিকারের পরিবর্তন অসম্ভব। কমিশনকে ক্ষমতাসম্পন্ন করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে তার কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেন, শুধু পুলিশ কমিশন করলেই সমস্যা সমাধান হবে না, কমিশনকে বাস্তবে কাজ করার মতো ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দিতে হবে। কমিশন যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে সরকারের হয়ে কাজ করে, তবে বাস্তব স্বাধীনতা ফিরে আনা সম্ভব হবে না। তিনি পুলিশের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন।

‘উই আর ওয়ার্কিং আন্ডার পলিটিক্যাল মাস্টার’

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কাজী মো. ফজলুল করীম নিজের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি সাড়ে ১৬ বছর ধরে ওএসডি ছিলেন। তখন মারামারির একটি মামলায় তাঁকে আসামি করে পুলিশ। অনেক দিন বাসায় থাকতে পারেননি। পরে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তিনি এই মামলার বিষয়ে তখনকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে দেখা করলে বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, ‘উই আর ওয়ার্কিং আন্ডার পলিটিক্যাল মাস্টার’।

ফজলুল করীম বলেন, এই উদাহরণ দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে পুলিশকে প্রভাবমুক্ত করা জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠন এখন অতীব জরুরি।

প্রথম আলো–অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

সব অংশীজনের দায়িত্ব রয়েছে

পুলিশকে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠনের মতো’ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। ভবিষ্যতে যারা সরকারে আসবে, সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব তাদের। এর সঙ্গে জড়িত সব অংশীজনকে পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা ও যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, কীভাবে আরও ডিগনিটি দেওয়া যায়, আরও রেসপেক্ট, সোশ্যাল মর্যাদা নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

আরও পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পুনর্গঠনকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি সামনে এসেছে। পুলিশকে পুনর্গঠন করতে হলে প্রথমে সমাজে পুলিশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ছোটদের কাছে পুলিশকে ভয়ের প্রতীক নয়, বরং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। তিনি বলেন, পুলিশের রাজনৈতিক প্রভাব ও পদায়ন-বদলিতে সিন্ডিকেটের সমস্যা চলছেই। তবে কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পদায়ন নিশ্চিত করা গেলে পুলিশ পুনরায় জনসেবামূলক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বক্তব্য দিচ্ছেন। আজ শনিবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে 'বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, কমিশনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে রাখা ছাড়া পুলিশ পুনর্গঠন সম্ভব নয়। পুলিশকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরও পুলিশ সংস্কারের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কমিশনের মাধ্যমে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্ক ও নেতৃত্বকাঠামো সুস্পষ্ট রাখতে হবে। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখনো পুলিশের হেফাজতে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। যদিও সংখ্যাটা কমে গেছে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অন্য প্রভাবের কারণে নিরীহ নাগরিকদের অবৈধভাবে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এখনো যদি এই অবস্থা থাকে, তবে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতিটা কেমন হবে, সেটা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।

প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন আইজিপি বাহারুল আলম। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়
ছবি: প্রথম আলো

জনবান্ধব বাহিনী সময়ের দাবি

বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এমন একটি পুলিশ বাহিনী চাই, যা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়; বরং জনগণের সেবা করবে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়; যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে হতে হবে।’

আরও পড়ুন

এরপর পুলিশের সংস্কার, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব এবং গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে পুলিশের পেশাদারত্ব বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় একটি সমন্বিত নীতিনির্ভর ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুলিশকে ভবিষ্যৎ উপযোগী, জনবান্ধব ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি।