টাকা পড়ে আছে, তবু কেন ঋণ নিচ্ছেন না সিনেমা হল মালিকেরা

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ছন্দা সিনেমা হল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করা হচ্ছেফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে ভালো মানের সিনেমা নেই—এ অভিযোগ অনেকের। দর্শকও সিনেমা হলে যাচ্ছে না। এ অবস্থায়  ঋণ নিয়ে হলমালিকেরা তা ফেরত দিতে পারবেন, সেই ভরসা না পাওয়ায় তাঁদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এমনটাই বলছেন মালিকেরা।

আবার ঋণের টাকা পেতেও আছে নানান ভোগান্তি। পাশাপাশি ঋণ নিয়ে হল সংস্কার বা নতুন সিনেমা হল বানিয়ে কোনো লাভ হবে না—এ আশঙ্কায় ঋণের টাকা পরিশোধ কীভাবে করবেন, সেটি নিয়েও সংশয় আছে হলমালিকদের। ঋণ দেওয়া-নেওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও হলমালিকদের এমন অনীহার মধ্যে এ খাতের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের বিপুল অঙ্কের টাকা একরকম অলস পড়ে থাকছে।  

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৯ সালে তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল ‘স্বপ্নপুরী’ সিনেমা হল চালু করেছিলেন। পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে মুন্সিগঞ্জে তাঁদের তিনটি সিনেমা হল ছিল। দুটি বন্ধ করে সেখানে গুদাম করা হয়েছে। আগে হলমালিকদের সমাজে অন্য রকম সম্মান ছিল। সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। এখন তাঁদের নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে।

কোনো কোনো সিনেমা দেখতে আসেন পাঁচ-ছয়জন দর্শক। ফলে তফসিলি ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঋণ নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। শর্তের বেড়াজালে এ ঋণ পাওয়ার যে প্রক্রিয়া তা-ও জটিল।
আওলাদ হোসেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  

আওলাদ হোসেন বলেন, ‘কোনো কোনো সিনেমা দেখতে আসেন পাঁচ-ছয়জন দর্শক। ফলে তফসিলি ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঋণ নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। শর্তের বেড়াজালে এ ঋণ পাওয়ার যে প্রক্রিয়া, তা-ও জটিল।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে নব্বইয়ের দশকে সিনেমা হল ছিল ১ হাজার ৪০০। সংখ্যাটা ক্রমেই কমে এখন ৫০ থেকে ৬০–এ নেমেছে। তবে সিনেমা হলের সংস্কার, নতুন হল নির্মাণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিম। এর আওতায় হলমালিকেরা চাইলে তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিতে পারেন।

ওই পুনঃ অর্থায়ন স্কিম নিয়ে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই স্কিমের অধীন স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য আগ্রহী তফসিলি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের সঙ্গে চুক্তি করার প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্পী ও কলাকুশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চলচ্চিত্রশিল্পে নবজাগরণ আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নের এ তহবিল থেকে প্রথম ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করার কথা ছিল। বিতরণকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সময় বিতরণ করার কথা ছিল বাকি ৫০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত চারটি সিনেপ্লেক্সের জন্য দুই মালিক ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। বর্তমানে স্কিমের আওতায় অন্য কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক তার গ্রাহককে ঋণ দিয়ে পুনঃ অর্থায়নের জন্য আবেদন করেনি।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রতিনিধিরা বলছেন, এ পর্যন্ত ৫২ জন হলমালিক ঋণের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে আবেদন করেছেন। একাধিক হলমালিক বলেন, ঋণের শর্ত পূরণ করা অনেক মালিকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে তফসিলি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মানছেন না।

অবশ্য ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা সিনেমা হলে গিয়ে যখন দেখেন দর্শক নেই, তখন আর এ ঋণ দিতে আগ্রহ পান না। অথচ এ ঋণ সিনেমা হলগুলো যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে জন্যই দেওয়ার কথা।

গত ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক চিঠিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে, ঋণ গ্রহণে মালিকদের আগ্রহ থাকার পরও এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেকে যথাসময়ে ঋণের জন্য আবেদন করেননি। তফসিলি ব্যাংকও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আবেদন করেনি।

ওই স্কিমের অধীন স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পেতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর চুক্তি করার মেয়াদ তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। আপাতত চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চুক্তির জন্য এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি তফসিলি ব্যাংক আবেদন করেছে (বর্তমানে তফসিলি ব্যাংক ৬১টি)। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ব্যাংক ১৫ কোটি ও ওয়ান ব্যাংক ৩ কোটি, অর্থাৎ মোট ১৮ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়নে আবেদন করে,  যা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন) কাজী আরিফ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সিনেমা হলগুলোকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কম সুদে ঋণের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগানো জরুরি।

কাজী আরিফ উজ জামান জানান, কোনো ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় পুনঃ অর্থায়নের জন্য আবেদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গ্রাহকের সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারে। এ পর্যন্ত তিনটি আবেদনের তদন্ত বা যাচাই–বাছাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করেছে। বর্তমানে আর কোনো আবেদন জমা নেই।

২০২০ সালের ২৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তথ্য মন্ত্রণালয়কে সিনেমা হলগুলো পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর চালু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন বলছে, নতুন সিনেমা হল নির্মাণ, বিদ্যমান হলের সংস্কার ও আধুনিকায়নে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে।

কারা ঋণ নিলেন, কেমন অভিজ্ঞতা

রাজশাহীর গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্সের মালিক ইসফা খায়রুল হক তিন কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। তা দিয়ে যন্ত্র কিনে সিনেপ্লেক্সে দুটি হলের মধ্যে একটি চালু করেছেন। তবে ভোগান্তির কথাও শোনালেন তিনি। বললেন, ‘এ ঋণের জন্য এক বছর অগ্রণী, পূবালীসহ বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরেছি। কেউ রাজি হয়নি। পরে ওয়ান ব্যাংকে গেলে তারাও প্রথমে দিতে চায়নি। কেননা, ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তখনো চুক্তি করেনি। পরে তারা চুক্তি করে এবং আমি ১০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। পেয়েছি ৩ কোটি।’

এ ছাড়া শো-মোশন লিমিটেড তিনটি সিনেপ্লেক্সের জন্য ১৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকার সীমান্ত সম্ভার এবং চট্টগ্রাম ও বগুড়ার সিনেপ্লেক্স।

সরকারের টাকা পড়ে আছে, অথচ ব্যাংকগুলো এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, এর পেছনে কর্মরতদের দেশপ্রেমের অভাব এবং গ্রাহকদের বিশ্বাস করতে পারছেন না বলেই মনে করছেন ইসফা খায়রুল হক। আক্ষেপ করে বললেন, একটি ব্যাংক আবেদনের ফাইলটিই হারিয়ে ফেলেছিল। আর এই এক বছর কত কর্মকর্তার টেবিলে যে ঘুরতে হয়েছে, তার হিসাব নেই।

ঋণ নিয়ে দোদুল্যমানতা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ‘সাথী’ সিনেমা হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিঞা মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণের জন্য আবেদন করেছিলাম প্রায় এক বছর আগে। অনেক কিছু চিন্তা করে দেখলাম, দেশে ভালো সিনেমা নেই, ঋণ শোধ করার টাকা পাব কোথায়?’ যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁরা যেন বুঝেশুনে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ঋণ নেন, সেই পরামর্শও দিলেন তিনি।

কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার ‘নিউ গুলশান’ সিনেমা হলের মালিক মো. আমির হামজা একসময় সিনেমা হলের রমরমা অবস্থার স্মৃতিচারণা করলেন। বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ২৮ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিল। তাঁর বাবা সিনেমা হলের ব্যবসা দিয়েই ঋণ পরিশোধ ও বাড়ি–গাড়ি করেছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন। পারিবারিক এ ব্যবসা চলছে ৪৫ বছর ধরে।

আমির হামজা ফিরে এলেন বর্তমানে। বলেন, ‘হল সংস্কারের জন্য বছর দেড়েক হলো পাঁচ কোটি টাকার জন্য আবেদন করেছি। এ নিয়ে খোঁজ নিতে গেলেই ব্যাংকের ম্যানেজার বলেন, “টাকা নিলে শোধ করবেন কীভাবে? নায়িকা মাহি নায়কের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। আপনিই বলুন, এই সিনেমা দেখতে দর্শক হলে আসবে? এখন সিনেমায় কোনো গল্প নেই। সিনেমা হলের হাউসফুল লেখা বোর্ডে ধুলো জমেছে। ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’–এর মতো একটা–দুইটা সিনেমা দিয়ে তো আর সারা বছর ব্যবসা করা সম্ভব নয়।”’

প্রত্যাশা ও বাস্তবতায় ফারাক

মূল ফটকের সামনের দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় এফডিসির ভেতরের কী অবস্থা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সরকারঘোষিত ঋণ তহবিলের সুবিধা ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে ২০২২ সালের ১২ মে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে শতাধিক হলমালিক ও উদ্যোক্তার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সভায় তিনি বলেছিলেন, সহজ শর্তে এই ঋণে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স ও হল নির্মাণের মাধ্যমে দেড়-দুই বছরে দেশে কয়েক শ সিনেমা হল চালু করা সম্ভব। তবে এমন প্রত্যাশা ও বাস্তবতায় অনেক ফারাক রয়ে গেছে।

সম্প্রতি বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরে ‘ঝংকার’ সিনেমা হলে ছবি দেখলে প্রতিটি টিকিটের সঙ্গে দর্শককে এক প্যাকেট করে বিরিয়ানি ফ্রি দেওয়ার খবর জানা যায়। দর্শকদের হলমুখী করতেই কর্তৃপক্ষের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ১৯৮৪ সালে সিনেমা হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। একপর্যায়ে দর্শকশূন্যতায় হলটিতে ছবি প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। এক দশক পর গত ২০ এপ্রিল এ হলে ছবি প্রদর্শন শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

গত ২১ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, নরসিংদীর রায়পুরার ‘ছন্দা’ সিনেমা হল স্থানীয় একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। আশির দশকে সিনেমা হলটি চালু হয়। বর্তমানে এটি এই উপজেলার একমাত্র চালু সিনেমা হল।
১০ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মায়ের জমানো টাকা আর শখের গাড়ি বিক্রি করে সিনেমা, অতঃপর নায়কের কান্না!’

২৪ এপ্রিল প্রথম আলোয় আরেকটি প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মারুফের ৪ কোটি ৬৩ লাখের “গ্রিন কার্ড” কত আয় করল?’ গত ঈদে মুক্তি পাওয়া কাজী মারুফ অভিনীত ও প্রযোজিত সিনেমাটি মাল্টিপ্লেক্সে মাত্র দুটি শো এবং টাঙ্গাইল ও সখীপুরে মিলনায়তন ভাড়া করে প্রদর্শিত হয়েছে। মুক্তির তিন দিনের মাথায় মাল্টিপ্লেক্স থেকে নেমেও যায় ছবিটি।

কাজী মারুফের মতে, সিনেমাটি দর্শককে দেখানোই গেল না। ‘গ্রিন কার্ড’ মুক্তির পর প্রেক্ষাগৃহ থেকে লাখ টাকাও আসেনি।

আরও পড়ুন

এক সময় শুধু গানের কথাতেই থাকবে অভিসার সিনেমা হল

“আরে টিকাটুলির মোড়ে একটা অভিসার সিনেমা হল রয়েছে, হলে নাকি এয়ারকন্ডিশন রয়েছে’—-‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় গানটি গেয়ে তুমুল পরিচিতি পান মতিন চৌধুরী।
১৯৬৯ সালে অভিসার হলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন আহমেদ। আশির দশকের শেষের দিকে অভিসারের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। পরে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী কে এম আর মঞ্জুর এবং তাঁর বন্ধু মো. সফর আলী ভূঁইয়া হলটি কিনে নেন। বকেয়া কর পরিশোধ করে ১৯৯০ সালের ২১ জুন নতুন করে চালু হয় অভিসার। ১৯৯৩ সালে অভিসারের ওপরে চালু করা হয় নেপচুন নামের আরেকটি হল। অভিসার হলে আসনসংখ্যা ১ হাজার ২৪০ টি। নেপচুনে আছে ৫০০ টি।
কথা হলো ৭৫ বছর বয়সী সফর আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে। আক্ষেপ করে বললেন, সিনেমা হলটি শুধু গানেই থাকবে, বাস্তবে আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

সরকার যে ঋণ দিচ্ছে তার জন্য আবেদন করেছেন কি না জানতে চাইলে সফর আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘হাত পা গুটিয়ে নিয়েছি। ঋণ নিয়ে তা শোধ করব কীভাবে? ঠিক করেছি আর সিনেমা হল চালাবোই না। অভিসার আর নেপচুন ভেঙে মার্কেট বানাব।’

সফর আলী ভূঁইয়ার মালিকানায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় এক সময় ১০টার বেশি সিনেমা হল ছিল। এখন টিকে আছে পাঁচটি। সেগুলোও বন্ধ। বললেন, ‘সিনেমা হলের যন্ত্রপাতি কেজি দরে বেঁচে দিয়েছি। বাসাবোতে দুইটি সিনেমা হল ভেঙে মার্কেট বানিয়েছি, ভালো চলছে।’

প্রণোদনায়ও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না চলচ্চিত্রশিল্প

গত ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘আমাদের চলচ্চিত্র আমাদের অহংকার, প্রেক্ষাগৃহে দেখব ছবি এই হোক অঙ্গীকার’। প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। চলচ্চিত্র তৈরিতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনাও দিচ্ছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এ শিল্প।

নব্বইয়ের দশকে সারা দেশে এক হাজার ৪০০ সিনেমা হল ছিল। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হলমালিকের সদস্যসংখ্যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৪০টিতে। ঈদ ছাড়া অন্য সময় দেশে ৬০টির মতো সিনেমা হল চালু থাকে। ঈদে বন্ধ সিনেমা হল চালু করে সংখ্যাটি দেড় শর মতো দাঁড়ায়।

করোনা মহামারির জন্য ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ ছিল সিনেমা হল। মহামারি শেষ হলেও হলমালিকেরা আর তেমন ব্যবসা করতে পারেননি।

হলমালিকেরা বলছেন, নব্বইয়ের দশক থেকেই তাঁরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিবছরই ছবি নির্মাণ কমছে। যা-ও হচ্ছে, বেশির ভাগ মানসম্মত নয়। অশ্লীলতা, পাইরেসির পাশাপাশি এখন সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ইউটিউব বা অনলাইনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর মানুষ তা মুঠোফোনে দেখে ফেলে।

আরও পড়ুন