আয়কর বিবরণী জমার সময় বাড়ল এক মাস
ব্যক্তিশ্রেণীর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ল। এর ফলে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নিয়মিতভাবে জরিমানা ছাড়াই আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল সোমবার বিকেলে এই ঘোষণা দেয়। প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার নিয়মিত সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও সময় বাড়ানো হলো।
তবে সময় বাড়ানোর কারণ হিসেবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলেছে, আয়কর অনুবিভাগের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনের কারণে অধিকাংশ করদাতার আয়কর-সংক্রান্ত অধিক্ষেত্র পরিবর্তিত হয়েছে। করদাতাদের সুবিধার্থে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার, এনবিআরের ওয়েবসাইট, আয়কর মেলা আয়োজন ও সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে করদাতাদের অধিক্ষেত্র সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
এনবিআর আরও বলেছে, সম্প্রতি করদাতাদের সুবিধার্থে ইটিআইএন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। নতুন ও পুরোনো করদাতারা অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিআইএন নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন নিয়ে ইটিআইএন রিটার্ন দাখিল করছেন। নতুন পদ্ধতিতে টিআইএন নিবন্ধন নেওয়ায় করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং বিভিন্ন ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডকে তা অবহিত করা হয়েছে।
তাই করদাতাদের সুবিধার্থে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের আয়কর বিবরণী জমার সময়সীমা বাড়িয়েছে এনবিআর।
প্রতিবছরই ৩০ সেপ্টেম্বর রিটার্ন জমার নিয়মিত সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু দেখা যায়, এই সময়ে বিবরণী খুব বেশি জমা পড়ে না। তাই প্রতিবছর সময় বাড়াতে বাধ্য হয় এনবিআর।
এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহর ও জেলায় অনুষ্ঠিত কর মেলায় এবার এক লাখ ৩২ হাজার বিবরণী জমা পড়েছে। আর আয়কর পাওয়া গেছে এক হাজার ১১৭ কোটি টাকা। তবে সার্কেল কার্যালয়ে কী পরিমাণ বিবরণী জমা পড়েছে, সেই চূড়ান্ত হিসাব এখনো পায়নি এনবিআর।
এদিকে কর অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল করদাতাদের সমাগম ছিল না বললেই চলে। প্রতিটি কর সার্কেলে যে পরিমাণ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী বা টিআইএনধারী রয়েছেন, তার ১০ শতাংশের বিবরণী জমা পড়েনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কর অঞ্চল-২-এর ৩৫ নম্বর সার্কেলে সাড়ে তিন হাজার টিআইএনধারী রয়েছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২১৬টি বিবরণী জমা পড়েছে। আর একই কর অঞ্চলের ২৫ নম্বর সার্কেলে দুই হাজার ২০০-এর বেশি টিআইএনধারী রয়েছেন। এর মধ্যে শতাধিক টিআইএনধারী বিবরণী জমা দিয়েছেন।
চলতি বছর এনবিআর অকার্যকর টিআইএন বাতিল করায় বর্তমানে ১৭ লাখ সক্রিয় টিআইএনধারী রয়েছেন। গত করবর্ষে সাড়ে ১২ লাখ বিবরণী জমা পড়েছিল।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, টিআইএন থাকলেই বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। সময়মতো আয়কর বিবরণী জমা না দিলে জরিমানা হয। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনার সর্বশেষ কর নির্ধারণের আরোপিত করের ১০ শতাংশ পর্যন্ত এককালীন জরিমানা করতে পারেন। তবে এককালীন জরিমানার ন্যূনতম পরিমাণ এক হাজার টাকা। এ ছাড়া বিবরণী দাখিলের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর পরবর্তী প্রতিদিনের ব্যর্থতার জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।