বাংলাদেশের তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন

  • তিন ব্যাংকে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলারের লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি ৮ লাখ টাকা।

  • ইসলামী ব্যাংকে আসে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলার

  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে আসে ১ হাজার ৬০০ ডলার

  • রূপালী ব্যাংক থেকে যায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ২০৪ ডলার

ছবি: আইসিআইজের সৌজন্যে

বাংলাদেশের তিন ব্যাংকের মাধ্যমে সন্দেহজনক বিদেশি লেনদেন সংঘটিত হয়েছে। ব্যাংক তিনটি হলো রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংক অর্থ পাঠিয়েছে এবং অপর দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ এসেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ সন্দেহজনক অর্থ গ্রহণ করেছে, পাঠিয়েছে তার চেয়ে বেশি।
সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোতে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলারের লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। সব লেনদেন হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে। আবার এসব লেনদেন সংঘটিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলান করপোরেশনের মাধ্যমে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামক ফাঁস করা নথিতে বাংলাদেশ নিয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) কাছ থেকে পাওয়া এ তথ্য ফাঁস করেছে আইসিআইজে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, যেটা পাওয়া গেছে, এটা নমুনামাত্র। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা আজ সর্বজনস্বীকৃত।

জানা যায়, প্রতিটি দেশের ব্যাংকগুলোর হিসাবে হঠাৎ করে বড় অঙ্কের কোনো লেনদেন হয়ে থাকলে সন্দেহজনক রিপোর্ট করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কোনো লেনদেন নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহ হলেও এ নিয়ে রিপোর্ট করে থাকে। প্রয়োজন হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ নিয়ে তদন্ত করে। তাই সন্দেহজনক লেনদেন মানেই অর্থ পাচার নয়।

বাংলাদেশে সন্দেহজন লেনদেন তদারকি করে থাকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউয়ের প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে দেখব। যদি আইনবহির্ভূত কিছু পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানানো হবে।’

আইসিআইজে তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সব মিলিয়ে আটটি লেনদেনকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং (এএনজেড) থেকে ইসলামী ব্যাংকে আসে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলার।

এ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-উল-আলম বলেন, ‘ওটা রপ্তানি আয়ের টাকা। যে প্রতিষ্ঠানের টাকা এসেছে, তারা দেশের ভালো প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ জানতে চায়নি।’

জানা গেছে, জিএমএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইলহাম সোর্সিংয়ের রপ্তানি আয়ের অর্থ এসেছিল ইসলামী ব্যাংকে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রেতা কালচার কিং রিচব্যান্ড ওই টাকা পাঠায়।

জিএমএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের সব রপ্তানি ঋণপত্র ও রপ্তানির টাকার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়। সব টাকাই রপ্তানি আয়ের।’

আরও পড়ুন

এ ছাড়া লাটভিয়ার রিজিওয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ১ হাজার ৬০০ ডলার। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ওসমান আলী বলেন, ‘আমরা প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।’

আর রূপালী ব্যাংক ২০১৬ সালের ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর ডয়েচে ব্যাংকে পাঠায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ২০৪ ডলার। ব্যাংকগুলোর লেনদেনের মধ্যে তিনটি নিষ্পত্তি হয় ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলান করপোরেশনের মাধ্যমে ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচটি লেনদেন নিষ্পত্তি হয়।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’