পি কের ঋণের টাকার ভাগ নেওয়ায় পরিচালক পদ গেল সাহিদ রেজার

এ কে এম সাহিদ রেজা

বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঋণের টাকার ভাগ নেওয়ায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন এ কে এম সাহিদ রেজা। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিষয়টি তদন্ত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে শুনানি হয়। এরপর গতকাল গভর্নর ফজলে কবির এই অপসারণ আদেশে সই করেন। পাশাপাশি আগামী দুই বছর ব্যাংক খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহিদ রেজার যেকোনো ধরনের অংশগ্রহণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এ কে এম সাহিদ রেজা ব্যাংক ও আমানতকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছেন। স্থায়ী কমিটি তাঁকে অপসারণের সুপারিশ করেছে। এ জন্য তাঁকে অপসারণের আদেশ প্রদান করা হলো।

এ নিয়ে যোগাযাোগ করলে এ কে এম সাহিদ রেজা বলেন, ‘আমার ঋণ নিয়মিত আছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং আমাকে ঋণ দিয়েছে, কিছু হিসাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছিল। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদের কাছ আপিল করব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে পি কে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা বের করে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক এ কে এম সাহিদ রেজা। এর মধ্যে এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয় ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি।

পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমটিবি মেরিন, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল, কনিকা এন্টারপ্রাইজ ও গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ঋণের টাকা এ কে এম সাহিদ রেজার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জমা হওয়ায় গত ৬ জানুয়ারি তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, আর তিনি ব্যাখ্যা দেন ৩ ফেব্রুয়ারি।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এই ঋণ হিসাব থেকে এ কে এম সাহিদ রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং, পদ্মা ব্লিচিং, ফ্যাশন প্লাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে থাকা হিসাবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা জমা হয়। উইন্টেল ইন্টারন্যাশনালের ৬৮ কোটি টাকার ঋণের ১৪ কোটি যায় সাহিদ রেজার চার প্রতিষ্ঠানে। গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ৬৪ কোটি টাকার ঋণের ৭ কোটি টাকা জমা হয় পদ্মা ওয়েভিং ও ফ্যাশন প্লাসের হিসাবে। এভাবে পি কে হালদারের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের টাকা জমা হয় সাহিদ রেজার বিভিন্ন হিসাবে।

পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমটিবি মেরিন, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল, কনিকা এন্টারপ্রাইজ ও গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ঋণের টাকা এ কে এম সাহিদ রেজার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জমা হওয়ায় গত ৬ জানুয়ারি তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, আর তিনি ব্যাখ্যা দেন ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেন গভর্নর। এরপর ৪ এপ্রিল এ কে এম সাহিদ রেজা স্থায়ী কমিটিতে লিখিত বক্তব্য দেন। এতে স্থায়ী কমিটি সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী অপসারণের সুপারিশ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে তাঁর ঋণে অনিয়ম ধরা পড়েছে। স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। এরপরই তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।’

আরও পড়ুন