জানুয়ারিতে সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে যাবে এনবিআর

রাজধানীর সেগুনবাগিচার এই ভবন ছাড়ছে এনবিআর
ছবি: সংগৃহীত

আগামী মাস থেকে আগারগাঁওয়ের নতুন রাজস্ব ভবনে কাজ শুরু করবেন শুল্ক-কর কর্মকর্তারা। চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সেগুনবাগিচার বর্তমান কার্যালয়ের মালপত্র নেওয়া হবে। প্রথম সপ্তাহ থেকেই আংশিক অফিস শুরু হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বসবেন। জানুয়ারি মাসজুড়ে এনবিআরের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে ৫০ বছর পর নিজের ভবন পেতে যাচ্ছে এনবিআর।

সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে যাওয়ার পথে নানা বিঘ্ন পেরোতে হয়েছে। জমিজমা-সংক্রান্ত মামলায় বছরের পর বছর এ প্রকল্প আটকে ছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাজস্ব ভবন উদ্বোধন ভিন্নভাবে করা হবে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভবন উদ্বোধন করতে পারেন। পাশাপাশি আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব সম্মেলন হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কীভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানো যায়, এটাই সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে এমন সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও কর কমিশনার লুৎফুল আজীম প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের মূল কাজ গত জুনে শেষ হয়। এরপর বৈদ্যুতিক সংযোগ, আসবাব, রঙের কাজ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি বসানোসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয়। তিনি বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন এ ভবনে এলে করদাতা-দর্শনার্থীদের সরকারি অফিস সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণা পাল্টে যাবে। সব আধুনিক সুবিধা থাকবে এখানে। অবকাঠামোসুবিধা থাকায় করদাতাদের সেবাও দ্রুত দেওয়া সম্ভব হবে।

ইতিমধ্যে এনবিআরের কর্মকর্তাদের নতুন ভবনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এনবিআরের সব অফিসের পাশাপাশি কর গোয়েন্দা, কর জরিপ দপ্তর, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-কর), বৃহৎ করদাতা ইউনিটসহ (এলটিইউ-ভ্যাট) কয়েকটি কর অঞ্চলের কার্যালয় আগারগাঁওয়ের নতুন ভবনে চলে যাবে।

২০০৮ সালে ভবন নির্মাণের জন্য ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। কিন্তু জমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০১৫ সালে কাজ শুরু হয়। নকশা পরিবর্তন হওয়ায় খরচ বেড়ে হয় ৪৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তবে রাজস্ব ভবন নির্মাণের ইতিহাসটি আরও দীর্ঘ। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্তরের দশক থেকেই সেগুনবাগিচার বর্তমান রাজস্ব ভবন থেকেই এনবিআরের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।

১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কর বিভাগের অনুকূলে দুই একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় সেখানে কাজ শুরু করতে পারেনি এনবিআর। পরে সেই জমি বরাদ্দ পায় বর্তমান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। প্রায় ১০ বছরের চেষ্টায় ২০০১ সালে বর্তমান জায়গায় দুই একরের প্লটটি বরাদ্দ পায় এনবিআর। সেখানেও বিপত্তি বাধে। ষাটের দশকে আগারগাঁও এলাকায় সব সরকারি কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেখানে রাজস্ব ভবন হচ্ছে, সেই প্লটের আদি মালিক উত্তরাধিকারীরা আশির দশকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে। সেই মামলা চলতে থাকে দশকের পর দশক।

আরও পড়ুন

সে কারনে ২০০১ সালে প্লট বরাদ্দ পেলেও এনবিআর জমি বুঝে পায়নি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে ভেতরে ব্যবহারযোগ্য জায়গা বাড়ানো হয়। প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে এ বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়।