ছয় মাস পর কমল মূল্যস্ফীতি

জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে। গত জুন মাসে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

টানা ছয় মাস ঊর্ধ্বগতির পর অবশেষে জুলাই মাসে এসে মূল্যস্ফীতিতে একটু স্বস্তির ছোঁয়া মিলল। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা ঠেকল।

অবশ্য এটিই নয়, অর্থনীতির খারাপ হওয়া অন্য সূচকগুলোতেও ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত রয়েছে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের পর এবার মূল্যস্ফীতিতে ভালো খবর এল।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ নেমেছে। এর আগের মাস জুনে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চাল ও ভোজ্যতেলের দাম কমায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে দাবি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের।

দেশে গত জানুয়ারি মাসের পর জুন পর্যন্ত টানা ছয় মাস মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা জুন মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে।

মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে গত জুলাই মাসে কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ল, কোন কোন পণ্যের দাম কমল, তা নিয়ে একটি তালিকা দিয়েছে বিবিএস। সংস্থাটির হিসাবে দাম কমার তালিকায় আছে—খাদ্যপণ্যের মধ্যে আটা, ময়দা, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, কাঁকরোল। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বোতলজাত সিলিন্ডার গ্যাস ও সোনা। এসব পণ্যের দাম কমার কারণে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমেছে।

তবে জুলাই মাসেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির এই তালিকায় আছে আলু, লাউ, বেগুন, বরবটি, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ, পোশাক, জুতা ও ওষুধ। তবে খাদ্যপণ্যের মধ্যে হরলিক্স, ওভালটিন, পাউডার দুধ, লবণ, নুডলস এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে পণ্য–সেবার দাম স্থিতিশীল ছিল।

জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমলেও বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। এই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা জুন মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে জুলাইয়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। তাই গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। দুই মাস ধরেই গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি আছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয় ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা শহরে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

সার্বিকভাবে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমার কারণ হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও ভোজ্যতেলের দাম কমার কারণেই মূলত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশেও দাম কমেছে। আবার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর দাম কমেছে। ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিবিএস মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের পর পরিকল্পনামন্ত্রী শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তাঁর দপ্তরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে বিবিএসের মূল্যস্ফীতি ও জাতীয় মজুরিসূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাধারণত মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি থাকে। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই এর ব্যতিক্রম। বিবিএস বলছে, ২০১০-১১ ভিত্তি বছর ধরে গত জুলাই মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। এর মানে, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সেই হারে মজুরি বাড়ছে না।