উৎসে করে ছাড় চান চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারকেরা

হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিকেরাছবি: বিএফএফইএর সৌজন্যে

নতুন বাজেটে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে কর কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএফইএ)। বর্তমানে এ খাতে উৎসে করের হার ১ শতাংশ।

আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এই দাবি তুলেছে বিএফএফইএ। সংগঠনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বাজেট বিষয়ে কিছু প্রস্তাব করেছে। এতে তারা বলেছে, এক দশকের বেশি সময় ধরে কাঁচামালের অভাবে উৎপাদনক্ষমতার মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাগুলো। তাতে রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের চিংড়ি ও মাছের চাহিদা এবং মূল্য দুটিই কমেছে।

চিংড়ি
ছবি: বিএফএফইএ

চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আয়কর ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। অন্যদিকে উৎসে কর ১ শতাংশ করা হয়। এমন তথ্য দিয়ে সমিতি বলেছে, সব রপ্তানি খাত সমান হারে মুনাফা করে না। বর্তমানে প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর আর্থিক অবস্থা শোচনীয় বিধায় ১ শতাংশের পরিবর্তে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত (চিংড়িতে ১০ ও মাছে ৫ শতাংশ) নগদ সহায়তা দেয় সরকার। তবে সেই সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় রপ্তানিকারকদের।

এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএফএফইএ বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য রপ্তানি মূল্য ও উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। নগদ সহায়তা কোনো আয় নয়। এতে কেবল লোকসান কিছুটা কমে। তাই নগদ সহায়তার ওপর অগ্রিম আয়কর আরোপ করার কোনো যুক্তি নেই। এটি বিলুপ্ত করা দরকার।

হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিকেরা
ছবি: বিএফএফইএর সৌজন্যে

এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি এবং মাছ প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ডেডওয়্যার হাউস–সুবিধা চায় বিএফএফইএ। তাদের যুক্তি, কাঁচামালের স্বল্পতায় দেশের প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাবদা, ট্যাংরা, আইড়, বোয়াল, বাইন ও কোরালের মতো দামি মাছগুলো আমদানি করে মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করা হলে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি বাড়বে। এতে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। বন্ড–সুবিধার আওতায় মাছ অবৈধভাবে দেশের বাজারে প্রবেশ করবে না। তাতে স্থানীয় বাজারে মাছের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি, উৎপাদন, বিপণন ইত্যাদিতে কোনো প্রভাব পড়ার শঙ্কা নেই।

হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বর্তমানে হিমায়িত চিংড়ির বিশ্ববাজারে রাজত্ব করছে উচ্চফলনশীল ভেনামি জাত। বাগদা চিংড়ির চেয়ে ১০ গুণ উৎপাদিত হয় ভেনামি। দেশে এই জাতের চিংড়ির উৎপাদন না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি কমছে। সম্প্রতি ভেনামি জাতের চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে।

প্রক্রিয়াজাত করা চিংড়ি
ছবি: বিএফএফইএ

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছর সেটি কমে ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমেছে। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩৭ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা চিংড়ি প্যাকেটজাত করছেন নারী শ্রমিকেরা
ছবি: বিএফএফইএ

প্রসঙ্গত, হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে চিংড়িই বেশি রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রপ্তানি হওয়া ৩৭ কোটি ডলারের মধ্যে ২৭ কোটি ডলারই চিংড়ি খাতের।

বিএফএফইএর তথ্যানুযায়ী, এখন ১০৫টি প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা এই সমিতির সদস্য। এর মধ্যে ব্যবসায়ে রয়েছে ৪০-৪৫টি।

আরও পড়ুন