এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ: নতুন বিধিমালার আওতায় যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদ ছোট হয়ে আসছে। বর্তমানে ৮০ জনের পর্ষদ ৬৮ জনে নামবে। পাশাপাশি মনোনীত পরিচালকের সংখ্যাও ৩৪ থেকে কমে ৪ জন হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রায় তিন দশক পর নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা করতে যাচ্ছে। খসড়া বিধিমালায় নতুন বাণিজ্য সংগঠন নিবন্ধন ও বিদ্যমান বাণিজ্য সংগঠন পরিচালনায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদে সংস্কারের বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে।

বিদ্যমানটি হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪। এটি করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে। উভয় বিধিমালাই তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশের ভিত্তিতে। ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে সরকার। নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে এ আইনেরই ভিত্তিতে। বিধিমালাটি অনুমোদিত হলে এটির নাম হবে ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৩’।

বর্তমানে ফেডারেশনের পর্ষদ ৮০ জনের। এসব পদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হয়েছেন। বাকি ৪০ পরিচালক পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের। তবে ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন (১৭ জন পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন ও ১৭ জন জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন) মনোনয়নের মাধ্যমে ভোট ছাড়াই পদ পান। বাকি ৪৬ জনকে সরাসরি সদস্যদের ভোটে জিতে আসতে হয়।

নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদে চেম্বার গ্রুপ থেকে ৩২ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩২ জন করে মোট ৬৪ জন পরিচালক হবেন। দুটি সংগঠন থেকে সরকার মনোনীত ২ জন করে ৪ জন পরিচালক অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৬৮ জন পরিচালক নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। সরকার মনোনীত চার পরিচালকের মধ্যে দুজন হবেন নারী। সরকার মনোনীত পরিচালকের বাইরে বাকি ৬৪ জনকে সরাসরি সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।

ফেডারেশনের পর্ষদে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহসভাপতি এবং চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে তিনজন করে মোট ছয়জন সহসভাপতি হতে পারবেন। সভাপতি অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে হলে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চেম্বার গ্রুপ থেকে হবেন। আবার সভাপতি চেম্বার গ্রুপ থেকে হলে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হবেন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনকে সরকার আগে ক, খ, গ—এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করলেও এখন থেকে ভাগ হবে ক ও খ নামে দুটি খসড়ায় এ কথা বলা হয়েছে।

আবার এফবিসিসিআইয়ের অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ৩২ জন পরিচালকের মধ্যে ২৪টি পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন থেকে হবেন। কোন খাত থেকে কয়জন পরিচালক হবেন, সেটি খসড়ায় উল্লেখ আছে। আবার চেম্বার গ্রুপের ৩২ জন পরিচালক নয়টি চেম্বার গুচ্ছ থেকে হবেন। যেমন ঢাকা বিভাগের ১৭টি চেম্বার থেকে পরিচালক হবেন ৮ জন। আবার ময়মনসিংহের ১৫টি চেম্বার থেকে হবেন ৪ জন পরিচালক। অন্যদিকে ১৫টি উইমেন চেম্বার থেকে ৪ জন পরিচালক হবেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সংগঠনে নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক অধিকার থাকা উচিত। অর্ধেকের বেশি নির্বাচন করে পর্ষদে আসছেন। যাঁরা নির্বাচন করে আসেন, তাঁরা মনোনীত ব্যক্তিদের ঠাট্টা করে বলেন, “অটো ডিরেক্টর।” এই জায়গায় পরিবর্তন দরকার। সবার জন্য সমান নিয়ম হওয়া উচিত।’

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৮০ জনের পরিচালনা পর্ষদ। ২১ মাস দায়িত্ব পালন করলাম অথচ পর্ষদ সভায় অর্ধেক পরিচালককেও পাইনি। বার্ষিক সাধারণ সভায়ও একই অবস্থা। তাহলে এত বড় পর্ষদের কী দরকার। কাজটি কী। আমার মনে হয়, দুনিয়ার কোনো ফেডারেশনে এত বড় পর্ষদ নেই। এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনা দরকার। সে জন্য সংস্কার আনতে হবে।’

খসড়া বিধিমালা নিয়ে জানতে চাইলে আজ শনিবার এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমরা চেয়েছিলাম। আমাদের চাওয়া অনুযায়ী হয়েছে। আমরা এই বিধিমালাকে স্বাগত জানাই। কারণ এফবিসিসিআইয়ে এত বড় পর্ষদের দরকার ছিল না।’

আরও পড়ুন