দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে বাংলাদেশি কোম্পানি

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি–রপ্তানির সিংহভাগ হয়ে থাকেফাইল ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ কনটেইনার জাহাজ কোম্পানির তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের এইচআর লাইনস। শিপিং–বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান আলফা লাইনারের সাম্প্রতিক তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।

আজ সোমবার কোম্পানিটি নতুন করে তাদের বহরে আরও দুটি জাহাজ যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে শিপিং খাতে মন্দার মধ্যেও বহর বাড়ানোর কথা ঘোষণা করল কোম্পানিটি।

জানতে চাইলে এইচআর লাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাইমা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া শুধু এইচআর লাইনসের জন্যই নয়, বরং এটা দেশের জন্যও গৌরবের। আর নতুন দুটি জাহাজ যুক্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় আয় বাড়বে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানও হবে।

আরও পড়ুন

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এত দিন শীর্ষস্থানে ছিল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব জাহাজ কোম্পানি ‘শিপিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া’। সংস্থাটির বহরে ৮ হাজার ৮০০ একক কনটেইনার পরিবহনক্ষমতার দুটি জাহাজ রয়েছে। আলফা লাইনারের তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ৮০ নম্বরে। ২ ধাপ ওপরে ৯ হাজার ২২০ একক কনটেইনার পরিবহনক্ষমতার ৬ জাহাজ নিয়ে এইচআর লাইনস ৭৮তম অবস্থানে রয়েছে।

এইচআর লাইনসের বহরে যুক্ত হওয়া নতুন দুটি জাহাজ হলো ‘এইচআর তুরাগ’ ও ‘এইচআর বালু’। এ ২টিসহ মোট ৮টি জাহাজের পরিবহনক্ষমতা দাঁড়াবে ১১ হাজার ৮৪০ একক কনটেইনার। আলফা লাইনার নতুন জাহাজের তথ্য হালনাগাদ করলে বৈশ্বিক তালিকায় আরও ৭ ধাপ এগিয়ে ৭১তম অবস্থানে উঠে আসবে কোম্পানিটি।

বিশ্বের কনটেইনার শিপিং কোম্পানিগুলোর বহরে থাকা জাহাজের পরিবহনক্ষমতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করে আলফা লাইনার। তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের মেডিটারিয়ান শিপিং কোম্পানি। বাংলাদেশে কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বের এই সেরা কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করছে এইচআর লাইনস।

এইচআর লাইনস কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর হাত ধরে গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার তৃতীয় প্রজন্ম এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এইচআর লাইনসের যাত্রা শুরু হয় করোনা মহামারির সময়। ২০২০ সালের জুনে ‘এমভি সারেরা’ ও ‘এমভি সাহারে’ নামের দুটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের আটটি জাহাজের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে পোর্ট কেলাং এবং চট্টগ্রাম থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো রুটে চলছে ছয়টি জাহাজ। নতুন একটি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর রুটে এবং অন্যটি চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চলবে।

বাংলাদেশের সিংহভাগ আমদানি পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই তিনটি বন্দর হয়ে আসে। আবার এই তিন বন্দর ধরেই রপ্তানি পণ্য যাচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।

এইচআর লাইনস চালুর এক দশক আগে দুটি বাংলাদেশি কোম্পানি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনা করত। ওই দুই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে শতভাগ কনটেইনার আনা-নেওয়া হতো বিদেশি জাহাজে। এখন বাংলাদেশে ৮ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন করা হয় এইচআর লাইনসের মাধ্যমে। নতুন দুটি জাহাজের আসার পর এই হার আরও বাড়বে বলে কোম্পানিটি আশা করছে।

কর্ণফুলী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এইচআর লাইনসের পরিচালক হামদান হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে কনটেইনার পরিবহনের ৫০ শতাংশের অংশীদার হতে চায় এইচআর লাইনস। আগামী দিনে বহর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশের পতাকাবাহী বা এ দেশে নিবন্ধিত জাহাজের সংখ্যা এখন ৯১। এইচআর লাইনসের জাহাজ দুটি এলে এ সংখ্যা ৯৩–তে উন্নীত হবে। নিবন্ধিত কনটেইনার জাহাজের সব কটিই এইচআর লাইনসের।

আরও পড়ুন