আরেকটা হলে ভালো, তবে সদিচ্ছার অভাব আছে বিসিকের

মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের সদিচ্ছার ঘাটতি। আছে জনবলের অভাবও। চামড়া খাত এমন একটি খাত, যেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু সাভারে বর্তমান যে চামড়াশিল্প নগর আছে, সেটা করতে গিয়ে ততটা গুরুত্ব দেয়নি বিসিক।

সদিচ্ছার অভাব বলার পেছনে কারণ হলো, সাভারে বর্তমান যে চামড়াশিল্প নগর আছে, তারা সেখানে যথেষ্ট নজরদারি করেনি। যদি তাদের সদিচ্ছা থাকত, তাহলে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), ডাম্পিং ইয়ার্ডসহ সব কাজ শেষ করে আমাদের সেখানে স্থানান্তর করত। কিন্তু এসব না করেই বিসিক আমাদের সেখানে নিয়ে গেছে। পদ্ধতিগত ভুলভ্রান্তির কারণে আমরা সেখানে দাঁড়াতে পারিনি। ফলে আজকে আমাদের এই করুণ পরিণতি। হাজারীবাগে ১ দিনে ১২২টি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন সাভারে সিইটিপি, ডাম্পিং—এসব কিছুই ছিল না। যদি সবকিছু থাকত, আজকে চামড়ার এত দুরবস্থা হতো না।

বিসিক যদি আরেকটি চামড়াশিল্প নগর করার উদ্যোগ নেয়, সেটি ভালো। কারণ, আরেকটি চামড়াশিল্প নগরের প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিসিকের ইচ্ছা থাকতে হবে। আরেকটি প্রকল্প ধরতে হবে এবং শেষও করতে হবে। এই মানসিকতা থাকতে হবে। ১৮ মাসের কাজ ৫ বছরেও শেষ করতে পারব না, এ ধরনের চিন্তাভাবনা থাকলে নতুন প্রকল্প না নেওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন

আরেকটি চামড়াশিল্প নগর দরকার এ কারণে যে ২৫টি ট্যানারি সাভার চামড়াশিল্প নগরে প্লট পায়নি। ছোট ছোট কিছু ট্যানারিও যেতে পারেনি। এত বড় মাপের শিল্পনগর করার মতো সক্ষমতা বিসিকের আছে ঠিকই। তবে ওদের সদিচ্ছার অভাব আছে। সদিচ্ছা থাকলে করতে পারবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হলো চামড়া। তাই এখানে হেলাফেলা করলে হবে না।

আমাদের নিয়মিত ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছে। সাভারে আমাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে গেল। আমরা হতাশ, সেখান থেকে কী আসবে? এত বছর আগে প্রকল্পটা নেওয়া হলো। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আজকে এত বছর সদিচ্ছার অভাবে কাজটি হয়নি।

জমির মূল্য নির্ধারণ করার পরও ইজারা দলিল দিতে পারেনি। যদি জমির ইজারা দলিলটি পেতাম, তাহলে ব্যাংক থেকে ঋণ পেতাম। বিসিক আজ পর্যন্ত আমাদের দলিল দিতে পারেনি। ইচ্ছা করলে আমাদের আগেই দিতে পারত। নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের এখনো জমির দলিল দেয়নি। এখানেও তাদের সদিচ্ছার অভাব।
বিদ্যমান চামড়াশিল্প নগরে এখনো কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিছুই করা হয়নি। বারবার বলার পরও কিছু করছে না। তাদের মধ্যে একটা দায়সারা ভাব।

আরেকটি চামড়াশিল্প নগরের দরকার আছে। সেটি হতে হবে পরিবেশবান্ধব। আমাদের চামড়া রপ্তানি এখন নিম্নমুখী। এটাকে ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে। তবে সবার আগে বিসিকের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।