ভোক্তাদের ঠকাতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেব না: বাণিজ্যমন্ত্রী

টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

ভোজ্যতেলসহ সব নিত্যপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সাধারণ ভোক্তাদের ঠকানোর সুযোগ নিতে দেবেন না ব্যবসায়ীদের।

বাণিজ্যমন্ত্রী আজ রোববার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা’ শীর্ষক বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে আলাদা করে পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকলেও একজন ছাড়া তাঁদের কাউকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ীরা অবশ্য নিজেরাও কথা বলার আগ্রহ দেখাননি।

ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশি শাহাবুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ওবায়দুল আজম, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করলেও ভোজ্যতেলের দাম ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে ট্যারিফ কমিশন যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে, সেগুলো সমাধানের ব্যাপারে কিছু বলেননি বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি নিয়মিত সভা করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কম-বেশি হওয়ার কারণে দেশেও তা ওঠা-নামা করে বলে মন্তব্য করেন টিপু মুনশি। বলেন, ‘সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। সব ব্র্যান্ডের খোলা ভোজ্যতেল কনজ্যুমার প্যাক ও বোতলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে সহজেই ব্র্যান্ড চেনা যাবে এবং ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে। শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি ও মজুত করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে প্রতিবছরের মতো সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হবে। এবার পণ্য বিক্রির পরিমাণ আগের বছরের প্রায় তিন গুণ হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলেছে, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর করা সম্ভব যদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১–এর বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়।

আরও পড়ুন

মিলমালিকেরা উৎপাদনক্ষমতার অতিরিক্ত সরবরাহ আদেশ (এসও) ইস্যু করে এবং এটাও ভোজ্যতেলের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানায় ট্যারিফ কমিশন। আরও বলেছে, মিলগুলো নিয়মিত এসওর বাইরে যে বিশেষ এসও ইস্যু করে, সেটাও সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

ট্যারিফ কমিশন বৈঠকে বলেছে, তরল পদার্থ পরিমাপের একক হচ্ছে লিটার। কিন্তু ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে মণ হিসেবে। আবার খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। এতে সাধারণ ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এদিকে আইনে ১৫ দিন মেয়াদ থাকলেও ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত মেয়াদেও এসও ইস্যু করে মিলগুলো, যা বাজারে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করে। এসও হাতবদল হওয়ার কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি হয় বলে জানানো হয় বৈঠকে।

আরও পড়ুন

সুপারিশ হিসেবে সংস্থাটি বলেছে, মিলগুলো যে এলাকায় ভোজ্যতেল বিক্রির জন্য এসও ইস্যু করে, সে এলাকা ছাড়া যাতে অন্য এলাকায় এগুলো সরবরাহ না করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসওর মেয়াদ যাতে ১৫ দিনের বেশি না হয়, সে পদক্ষেপও নিতে হবে। আবার মিল গেটে ভোজ্যতেলের মূল্য যাতে ১০ দিন স্থিতিশীল থাকে, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী এসব সুপারিশ নিয়ে কিছুই বলেননি।

টিসিবির আজ রোববারের বাজারদর অনুযায়ী, সয়াবিন তেল খোলা ১১২ থেকে ১১৬ টাকা ও বোতল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং পাম তেল খোলা ৯৭ থেকে ১০০ টাকা ও সুপার ১০২ থেকে ১০৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় সয়াবিন ২৩ থেকে ২৮ শতাংশ এবং পাম তেল ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ বেড়েছে।