স্থানীয় শিল্প শক্তিশালী না হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। আজ রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে
ছবি: ঢাকা চেম্বারের সৌজন্যে

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেছেন, স্থানীয় শিল্প শক্তিশালী না হওয়ায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। এ ছাড়া নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও আছে বেশ কিছু দুর্বলতা। এসব কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কম আসছে।

আজ রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সমসাময়িক অর্থনীতিবিষয়ক ১০টি বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি চলতি বছরে সংগঠনের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি। এ সময় ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আরমান হক ও সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর কিছুটা হলেও আমরা এফডিআই পেয়েছি। কিন্তু তা ছিল পরিমাণে অনেক কম। সেই তুলনায় প্রতিবেশী দেশগুলো আমাদের চেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। মহামারির মধ্যে ভিয়েতনামে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ভারতে এসেছে ৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি। অথচ আমাদের এখানে এসেছে মাত্র ২৫৬ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।’

জিডিপির বিপরীতে এফডিআইয়ের পরিমাণেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে জানান রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, এফডিআই-জিডিপি অনুপাত ভিয়েতনামে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, ভারতে ২ দশমিক ২ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে তা ১ শতাংশের কম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এটা মাত্র শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।

দেশি শিল্প খাত শক্তিশালী না হলে এফডিআইয়ের এ নিম্ন হার বাড়বে না বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

করোনা মহামারির মধ্যে চীন-জাপানের মতো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায়নি জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষয়িষ্ণু শিল্পগুলোকে গত দুই বছরে আকৃষ্ট করে দেশে আনা যায়নি। অনেক বিনিয়োগকারী কিন্তু দেশে না এসে ভিয়েতনামে চলে গেছেন। এই আকৃষ্ট না করতে পারার পেছনে আমাদের কিছু জটিলতা আছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে।’

রিজওয়ান রাহমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ওয়ান–স্টপ সেবা দ্রুত বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এ সেবা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বিডাকে সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চলগুলোয় পরিষেবা উন্নত করতে হবে। ব্যবসার নিবন্ধন থেকে শুরু করে জমি বরাদ্দ, গ্যাস–সংযোগসহ সব কাজে সময় ও ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কিন্তু এফডিআই র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা ওপরে যেতে পারব না। আর এগুলো করা গেলে আমরা বিদেশে প্রচার করতে পারব যে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিনিয়োগের জন্য উপযোগী হয়েছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাত, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল ব্যবস্থা, কর ব্যবস্থাপনা, এলডিসি উত্তরণসহ কয়েকটি বিষয়ে সংগঠনের পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনার দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিদ্যমান করকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা নিরসন, যুগোপযোগীকরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নীতি–সহায়তা প্রদানের ওপর জোর দেন তিনি।

এ ছাড়া এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানিমুখী পণ্যে শুল্কহার বর্তমানের চেয়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে জানিয়ে করপোরেট করহার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।