ডলারে বড় ক্ষতি ওয়ালটনের, কমেছে মুনাফা

ওয়ালটন পণ্য
ফাইল ছবি

ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বড় অঙ্কের মুনাফা হারিয়েছে ইলেকট্রনিক খাতের দেশীয় জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি কমে গেছে। বেড়েছে ঋণের পরিমাণ। এসব কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ও চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে কোম্পানিটি ৫৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত বছরের একই সময়ে এ লোকসানের পরিমাণ ছিল ২১ কোটি টাকা। আর গত জুলাই থেকে মার্চ—এ ৯ মাসে ডলারের কারণে কোম্পানিটি লোকসান করেছে প্রায় ৩৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি টাকা।

ডলারের দামের অস্থিরতায় গত বছরের শেষার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি বড় অঙ্কের মুনাফা হারায়। অনেক কোম্পানি লোকসানে চলে যায়। পরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ও নানাভাবে খরচ কমিয়ে এ লোকসান কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নেয় কোম্পানিগুলো।

ডলারের দামের হেরফেরের কারণে বিপুল লোকসান করায় কোম্পানিটির মুনাফাও কমে গেছে। গত জানুয়ারি-মার্চে কোম্পানিটির মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩৫ কোটি টাকায়। তাতে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমে দাঁড়ায় ৭ টাকা ৭৮ পয়সায়। অথচ গত বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ৩৭৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। তাতে ওই বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে ওয়ালটনের ইপিএস ছিল ১২ টাকা ৩৪ পয়সা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৫৭০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ডলারের বাজারেও দেখা দেয় অস্থিরতা, যার প্রভাব পড়ে আমদানিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। গত এক বছরে দেশে ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় ওঠে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু তাতেও সফল না হয়ে সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে দেশে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় এবং আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)।

ডলারের দামের এ অস্থিরতায় গত বছরের শেষার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি বড় অঙ্কের মুনাফা হারায়। অনেক কোম্পানি লোকসানে চলে যায়। পরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ও নানাভাবে খরচ কমিয়ে এ লোকসান কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নেয় কোম্পানিগুলো। তাতে সফলও হয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মুনাফা কমলেও লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে তালিকাভুক্ত বড় কোম্পানিগুলো। ওয়ালটনও তাদের মধ্যে অন্যতম।

আরও পড়ুন

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ওয়ালটনের মুনাফা ছিল মাত্র ১৪ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফা করেছে ২৩৫ কোটি টাকা। তাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা দাঁড়ায় ২৫০ কোটি টাকায়।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ঋণ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০২ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ঋণ বেড়েছে ৪৬০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন