সংকট পেছনে ফেলে ৪.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি চীনের

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এখন নেতৃত্বস্থানে আছে চীন।
ছবি: রয়টার্স

করোনা সংকটের উত্তাপ যে চীন ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে, তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ সোমবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অবশ্য অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, বছরের এই তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বলা যায়, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এখন নেতৃত্বস্থানে আছে চীন। বছরের প্রথমে করোনা সংকটের কারণে অর্থনীতি যে অবস্থায় গিয়েছিল, সেখান থেকে এগিয়ে প্রায় ৫ শতাংশের কাছাকাছি এই প্রবৃদ্ধি খুবই আশাব্যঞ্জক। গত ডিসেম্বরের শেষে প্রথম করোনা সংক্রমণের কথা বাইরের বিশ্বের কাছে জানায় চীন। কঠোর লকডাউনের পদক্ষেপ নেয় তারা। উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়, যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। ১৯৯২ সালে ত্রৈমাসিক পরিসংখ্যান রেকর্ড করা শুরু করার পরে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সংকোচন।

আজ প্রকাশিত পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় যে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ছে
ছবি: রয়টার্স

গতি ফিরছে

আজ প্রকাশিত পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় যে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ছে, যদিও বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই দেশটির অর্থনৈতিক তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নতুন এই পরিসংখ্যান তুলনা করা হয়েছে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের সঙ্গে।
আইএনজি চীনের প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিস প্যাং বলেন, ‘আমি শিরোনামের নম্বরটি খারাপ বলে মনে করি না। চীনে বেশ স্থিতিশীল হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে, যা ভোগ বাড়াবে।’
এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে চীনের বাণিজ্য পরিসংখ্যানও শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে ইঙ্গিত করেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় রপ্তানি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আমদানি ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দশক ধরে চীন গড়ে প্রায় ৯ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছিল; যদিও এই গতি ধীরে ধীরে কমে গিয়েছিল। এর মধ্যে এল কেভিড-১৯। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। সব মিলিয়ে গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়।

প্রণোদনায় প্রাণ পেয়েছে অর্থনীতি

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং কর্মসংস্থান সমর্থন করার জন্য চীন সরকার এ বছর বিভিন্ন পদক্ষেপের সূচনা করে। ভ্রমণ বন্ধ ও মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় নাজুক হয়ে পড়ে অর্থনীতি। তখন বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের গোড়ার দিকে প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং হুঁশিয়ার করে বলেন, চীনকে তার পুরো বছরের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছে যায়। বিশ্লেষকেরা বলেন, চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে অব্যাহত রয়েছে, রপ্তানিতে ফিরে আসছে। চীনের অর্থনীতি কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অভাবনীয় হারে বাড়ছে। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপ কাজে লেগেছে।

আরও পড়ুন

সেই সঙ্গে এ মাসের শুরুতে ‘বার্ষিক গোল্ডেন উইকের’ ছুটি উদ্‌যাপন করেছেন চীনের মানুষ। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার দিবসসহ চন্দ্র উৎসবও ছিল এই গোল্ডেন উইকে। এই গোল্ডেন উইকে এবার প্রায় ৬৩ কোটি মানুষ দেশের ভেতরেই ভ্রমণ করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের ভ্রমণের প্রায় ৮০ শতাংশ। ইতিমধ্যে পর্যটকদের ব্যয়ও গত বছরের স্তরের প্রায় ৭০ শতাংশ ফিরে এসেছে, ৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলারের, যা গত বছরের রেকর্ড থেকে মাত্র ১২ শতাংশ কম।

আরও পড়ুন