বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে পোশাকের ক্ষতিই বেশি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিটপী গ্রুপের পোশাক কারখানা রেমি হোল্ডিংসের ১ লাখ ৪৭ হাজার ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক পুড়ে গেছে। একই গ্রুপের আরেক কারখানা তারাসিমা অ্যাপারেলসের ৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাকও ধ্বংস হয়েছে। এসব পোশাকের ক্রেতা বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ও টার্গেট।

গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার পরদিন সীতাকুণ্ড থানায় এ–সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রেমি হোল্ডিংস ও তারাসিমা অ্যাপারেলসের রপ্তানি ব্যবস্থাপক (এক্সপোর্ট ম্যানেজার) কামরুল হাসান। গতকাল সোমবার তিনি বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

বিটপী গ্রুপের এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ আরও বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার রপ্তানি পণ্য বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৭০ কনটেইনার বোঝাই খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়েছে, যা রপ্তানির জন্য জাহাজে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। তবে সীতাকুণ্ডের ঘটনায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের ক্ষতিই বেশি হয়েছে। এ ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো মেলেনি।

ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গত রোববার তাদের সদস্যদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়। গতকাল বিকেল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত ২৮টি কারখানা তাদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে সংগঠনটির একটি সূত্র।

বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, ২৮ পোশাক কারখানার ৩০ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৪ পিস পোশাক আগুনে পুড়ে গেছে, যার রপ্তানি মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯২ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৫ কোটি টাকা। এসব পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, টার্গেট করপোরেশন, এমবিএইচ, বেস, ফেম এলএলসি ইত্যাদি। যেসব কারখানা ক্ষতির হিসাব পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে জেএফকে ফ্যাশন, একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, ভার্সেটাইল টেক্সটাইল, ভিশন অ্যাপারেলস, ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস, আয়শা ক্লথিং, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস, অ্যারো ফেব্রিকস, ডিভাইন ইনটিমেটস, প্যাসিফিক জিনস, সি ব্লু অ্যান্ড সি টেক্স টেক্সটাইল, রিও ফ্যাশনওয়্যার অন্যতম।

বিজিএমইএতে ক্ষতির হিসাব না পাঠালেও গত রোববার মিতালি গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, রপ্তানির জন্য গত ৩১ মে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৮৮ হাজার জ্যাকেট ও শার্ট পাঠানো হয়। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার।

কয়েকজন পোশাকশিল্পমালিক জানান, এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এইচঅ্যান্ডএমের পোশাকেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

জানতে চাইলে এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের ঘটনায় যেসব পোশাক কারখানার তৈরি পোশাক পুড়ে গেছে, তাদের রপ্তানির অর্থ পেতে কোনো সমস্যা হবে না।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাকের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে আরও সময় লাগবে। কারখানাগুলো আমাদের তথ্য পাঠাচ্ছে।’