চাকরির সাক্ষাৎকারে তাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে গরুর মতো ডাকতে বলা হয়েছিল

নতুন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া চলাকালীন অর্ধেকের বেশি মানুষের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়।
ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে একজন আইনজীবীর অফিসে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার ছিল লাইয়ের। সময়মতোই ওই অফিসে পৌঁছেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ওই সাক্ষাৎকার বাতিল করা হয়। লাইকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আবারও পরের দিন অফিসে যেতে বলা হয়েছিল।

কাগজপত্র নিয়ে ওই দিন ফিরে গিয়েছিলেন লাই। কিন্তু পরে ওই অফিস থেকে তাঁর মুঠোফোনে একটি বার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তায় বলা হয়, সাক্ষাৎকার ‘বাতিল’ ঘোষণা পরীক্ষারই একটি অংশ ছিল। এই পরীক্ষায় তিনি ফেল করেছেন। এ কারণে তাঁকে চাকরিটা দেওয়া যাচ্ছে না। এই বার্তা পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন লাই।

লাই তাঁর চাকরির সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এই অভিজ্ঞতাটা ‘পুরো উদ্ভট’ ছিল। আর এ কারণেই তিনি চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।

চাকরির সাক্ষাৎকারের এমন অভিজ্ঞতা লাইয়ের একার নয়; আরও অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান। নিয়োগ সংস্থা হেইসের তথ্য বলছে, নতুন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া চলাকালীন অর্ধেকের বেশি মানুষের এমন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে।

বিবিসি কয়েক ডজন মানুষের কাছে এমন গল্প শুনেছে—যাঁরা অদ্ভুত, আপত্তিকর এবং অপ্রস্তুত সাক্ষাত্কারের মধ্য দিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন

সাক্ষাৎকারের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কী শিক্ষা দেয়

লাইয়ের মতো এইজিন ফুও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম মজুরিতে স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর পদে চাকরির অবেদন করে উদ্ভট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। সাক্ষাত্কারের সময় সব প্রার্থীকে হাত ও হাঁটু মাটিতে ফেলে চারপাশে হামাগুড়ি দিতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁদের গরুর মতো শব্দ করতেও বলা হয়েছিল।

এইজিন বলেন, ‘তিন থেকে চার মিনিট আমাদের এমন করতে হয়েছিল। এতে আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। এটি করতে বলা একদম ঠিক ছিল না। কিন্তু অন্যরা সবাই করছিল, এ কারণে আমার ক্ষেত্রে তা করার একটা চাপ ছিল।’

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা বলেছেন, প্রার্থীরা সবাই ‘মজার’ কি না, তা দেখতেই এটা করতে বলা হয়েছিল। তবে এইজিন বলছেন, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা হয়তো নিজেদের ক্ষমতার এভাবেই প্রয়োগ করেছেন।

জ্যেষ্ঠ পদে আবেদন করা নারীদের সন্তান নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন করা হয়
ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া

বয়স নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরির জুলি বলেছেন, তিনি জেনেছেন, সাক্ষাত্কার গ্রহণকারীরা কখনো কখনো নিজের মূল ভূমিকা থেকে ‘সত্যিই বিচ্ছিন্ন’ হতে পারেন। ২০২২ সালে খণ্ডকালীন কপিরাইটার পদে নিয়োগের জন্য তিনি একটি ভিডিও সাক্ষাত্কার থেকে এটি শিখেছেন।

জুলি বলেন, তিনি শুরুতে ভেবেছিলেন, সব ঠিকঠাক চলছে। এ কারণে তিনি সব বাক্সে টিক মার্ক দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি আর কত বছর বাঁচবেন বলে মনে হয়? এর জবাবে জুলি জানিয়েছেন, তিনি কেবল ৬০ বছর বয়সের কাছে। তাই এখনই অবসর নেবেন না।

একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক পার্ল কাসিরে বলেছেন, মিলানের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডে জনসংযোগ বিভাগে আংশিকভাবে রিমোট কাজের জন্য দ্বিতীয় সাক্ষাত্কার দিয়েছিলে তিনি। এ সময় তাঁর ঐতিহ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

কাসিরে লন্ডনে থাকেন। শৈশবে ইউরোপে বসবাস ও পড়াশোনা করার জন্য তিনি উগান্ডা ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, নিয়োগকর্তা তাঁর জন্মস্থানের কারণে এই কাজের জন্য লন্ডনের মজুরির পরিবর্তে উগান্ডার মজুরি দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি তাঁর আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

আইটি ইঞ্জিনিয়ার টম (ছদ্মনাম)। তাঁকে একবার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত্কারে কারও সঙ্গে কথা বলার পরিবর্তে গুদাম সহকারীর কাজের জন্য প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছিল। টম কিছুটা অটিস্টিক। কিন্তু এই সমস্যা এতই সামান্য যে তা তিনি মানুষকে জানাতে চান না।

সন্তান ও লিঙ্গ প্রসঙ্গ

বিবিসিকে অনেকেই বলেছেন, লিঙ্গের ভিত্তিতে নিয়োগের সময় তাঁরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কর্মী নিয়োগের প্ল্যাটফর্ম অ্যাপ্লাইডের তথ্য অনুসারে, নিয়োগপ্রক্রিয়া চলার সময় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন নারীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তাঁর সন্তান আছে কি না বা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না।

এঁদের মধ্যে একজন হলেন অ্যাপ্লাইডের প্রধান নির্বাহী খ্যাতি সুন্দরম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁকে অসংখ্যবার প্রশ্ন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রার্থীদের তাঁদের বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান আছে কি না বা তাঁরা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না—নিয়োগকর্তাদের এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া বেআইনি।

তবে অ্যাপ্লাইড দেখেছে, জ্যেষ্ঠ পদে আবেদন করা নারীদের জন্য এই সমস্যাটি আরও প্রকট। এসব পদে দুই-পঞ্চমাংশ নারীকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

খ্যাতি সুন্দরম বলেন, এর একটি কারণ হলো গর্ভাবস্থার আনুমানিক ‘অর্থনৈতিক যোগ্যতা’৷ বেতন যত বেশি হবে, মাতৃত্বকালীন ভাতা তত বেশি দিতে হবে। নিয়োগকর্তারা এই ঝামেলা চায় না।