৪১তম ও ৪২তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে সাত ব্যাংকের পরীক্ষারও তারিখ ঘোষণা করা হবে। এসব পরীক্ষায় যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ
পড়ার রুটিন নিয়ে যুগ যুগ ধরেই আলোচনা-জিজ্ঞাসা চলে আসছে। সাধারণভাবে চিন্তা করলে মনে হবে উচ্চশিক্ষা ও চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তির পড়ার রুটিন নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্যারিয়ারে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়লে অনেকের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন সরল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্য বাস্তবায়নে দ্বিধাগ্রস্ত হতে দেখা যায়। এটি অতি কমন একটা ব্যাপার। অনেকটা বিপদে পড়ে বুদ্ধি লোপের মতো।
রুটিন করার চিরাচরিত যে পদ্ধতি চালু আছে, সেটা খুব একটা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। ঘড়ির কাঁটা ধরে এতটা থেকে অতটা পর্যন্ত বাংলা...বিজ্ঞান...ইংরেজি ইত্যাদি উল্লেখ করে রুটিন করলে তা নিয়মিত বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিনসাধ্য এবং পরিশেষে সামান্যই ফলপ্রসূ হয়। এতে দায়িত্ব সম্পাদনের চেয়ে দায় সারাই হয় বেশি।
উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি বাংলার জন্য এক ঘণ্টা বরাদ্দ রেখেছেন। দেখা গেল আপনি যতটুকু পাঠ শিখবেন পরিকল্পনা করেছিলেন, তা অসম্পূর্ণ থাকতেই সময় ফুরিয়ে গেল। ঘড়ির কাঁটার হিসাবে এক ঘণ্টা পড়া তো হলো, পড়ার হিসাব কিন্তু মিলল না। অপরদিকে বিজ্ঞানের জন্য আপনি বরাদ্দ রাখা দেড় ঘণ্টার বিপরীতে নির্দিষ্ট দিনের পড়া হয়তো ৪০ মিনিটে শেষ করে ফেললেন। বাকি সময় আপনি বিজ্ঞান পড়ে অবশেষে এখানেও কোনো টপিক পড়া অসম্পূর্ণ রেখে থামবেন অথবা রিল্যাক্সের নামে সময়টুকু হয়তো অপচয় করবেন। দিন শেষে সময়ের মাপে পড়ার হিসাব হয়তো মিলবে অথবা মিলবে না। জিনিসটা কিন্তু হয়ে দাঁড়াল জগাখিচুড়ি!
ঘড়ির সময় উল্লেখ করে ঘণ্টার পরিমাপে সাজিয়ে নিন রুটিন—
জাগরণ (ও নামাজ) :
অধ্যয়ন :
নাশতা ও গোসল :
অধ্যয়ন :
(নামাজ ও) মধ্যাহ্নভোজন :
অধ্যয়ন :
(নামাজ), বিশ্রাম-ঘোরাফেরা (ও নামাজ):
অধ্যয়ন :
নৈশভোজ :
অধ্যয়ন :
ঘুম :
এভাবে রিজিট রুটিন ফলো করতে গিয়ে অবসাদ ও একঘেয়েমি বাসা বাঁধতে পারে মনে। তার ওপর কিছুই শেষ করতে পারছি না, এমন একটা হতাশা আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। পড়ালেখা একটা মন তথা স্নায়বিক বিষয়। এদের বিগড়ালে পড়া হবে কী করে? তাহলে কেমন হবে রুটিন?
প্রথমত, আপনার ন্যূনতম আবশ্যক ঘুমের সময়টুকু নির্ধারণ করুন। এটি আবেগের বশে তেড়েফুঁড়ে কাল্পনিক মাত্রায় নির্ধারণ করবেন না। ঘুমে অবান্তর কাটছাঁট করলে পড়ালেখা তো বটেই, আপনার পুরো জীবনচক্রের বারোটা বেজে যাবে। এবার সময়কে নিচের স্লট অনুসারে সাজান।
ঘড়ির সময় উল্লেখ করে ঘণ্টার পরিমাপে সাজিয়ে নিন।
জাগরণ (ও নামাজ):
অধ্যয়ন:
নাশতা ও গোসল:
অধ্যয়ন:
(নামাজ ও) মধ্যাহ্নভোজন:
অধ্যয়ন:
(নামাজ), বিশ্রাম-ঘোরাফেরা (ও নামাজ):
অধ্যয়ন:
নৈশভোজ :
অধ্যয়ন:
ঘুম:
যাঁদের অফিস আছে, তাঁরা কাজের সময় রুটিনে উল্লেখ করে নেবেন।
এবার বিষয়গুলোর নাম পাশাপাশি আরেকটি তালিকায় লিখুন। অধ্যয়নের টাইম স্লটে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো রূপ কম্প্রোমাইজ করবেন না। ঘুমের মতো করে পড়ালেখার বাউন্ডারিটাও কঠোরভাবে বজায় রাখুন। প্রতিটি বিষয়ে টপিকভিত্তিক ছোট ছোট টার্গেট নির্ধারণ ও সম্পন্ন করুন। একটি টপিক শেষ হলে বিষয় পরিবর্তন করুন। প্রতিদিন একই ক্রম অনুসরণ না করে সাফল্য ও র্যান্ডোমাইজ করে পড়ুন। এভাবে পড়লে আপনার পড়ায় বৈচিত্র্য ও পূর্ণতার অনুভব আসবে। পড়াটা বোঝা নয়, উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
সত্যকে মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি থাকলে হতাশায় পড়তে হয় না। দুটি সত্য এখন উপস্থাপন করছি, যা মেনে নিলে আপনার মঙ্গল।
১.
সময়কে বিলম্বিত বা দীর্ঘ করার কোনো উপায় নেই। যা কিছু করা সম্ভব, বিদ্যমান সময়ের মধ্যেই করতে হবে।
২.
অসম্ভব ও অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করে লাভ নেই। এক সপ্তাহে কখনোই পাঁচ হাজার পৃষ্ঠা পড়া যাবে না, আয়ত্ত করা তো দূরের কথা। যে সময়ে যতটুকু শেখা সম্ভব, ততটুকুই শিখুন। ভালো করে এবং কাজে লাগানোর মতো করে শিখুন। বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে অধিক সম্ভাবনাময় ও প্রোডাক্টিভ টপিক বেছে নিন।
*লেখক: মো. রুহুল আমিন শরিফ, ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত, মেধাক্রম প্রথম