বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের দায়িত্ব, সুযোগ-সুবিধা

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। সিভিল সার্ভিসে সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত-২ ক্যাটাগরিতে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কাজ, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। এবার ষষ্ঠ পর্বে থাকছে বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা।

বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার

বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন।

পরিচিতি, পদায়ন ও দায়িত্ব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুটি উইং। ১. কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট (শুল্ক ও আবগারি) ও ২. ইনকাম ট্যাক্স (কর)। শুল্ক ও আবগারি বিভাগকে শুল্ক, আবগারি, মূল্য সংযোজন করসংক্রান্ত কাজগুলো করতে হয়।

সারা দেশে শুল্ক বিভাগকে ছয়টি কাস্টমস হাউস (ঢাকা, পানগাঁও, ইন্টারনাল কনটেইনার ডিপো-কমলাপুর, চট্টগ্রাম, মোংলা ও বেনাপোল) এবং মূল্য সংযোজন করকে ১১টি ভ্যাট কমিশনারেটে (ঢাকা পূর্ব, ঢাকা পশ্চিম, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, বৃহৎ করদাতা ইউনিট-ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, যশোর) ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বন্ড কমিশনারেট আছে। প্রতিটির প্রধান একজন কমিশনার। শুল্ক ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীন শুল্ক বিভাগ (প্রতিটি বন্দরে) ও ভ্যাট বিভাগ (প্রতিটি জেলায়) রয়েছে, যার প্রধান হিসেবে একজন সহকারী কমিশনার/ উপকমিশনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শুল্ক মূল্যায়ন ও প্রত্যার্পণ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর, সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, আপিল কমিশনারেট, আপিল ট্রাইব্যুনালসহ শুল্ক ও আবগারি–সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পদায়ন হতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের মূল পদ হলো—সহকারী কমিশনার, উপকমিশনার, যুগ্ম কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, কমিশনার, সদস্য। এ ছাড়া ট্রেনিং একাডেমি ও অন্যান্য দপ্তরে সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক, যুগ্ম পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মহাপরিচালক প্রভৃতি পদে পদায়ন হয়ে থাকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান (ইনকাম ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট প্রভৃতি উইংয়ের প্রধান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এনবিআর চেয়ারম্যান সাধারণত সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার হয়ে থাকেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে মোট ১৫ জন সদস্য আছেন। এর মধ্যে আটজন কর ক্যাডার থেকে এবং সাতজন শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার থেকে হয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন

প্রশিক্ষণ

যোগদানের পর শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অন্যান্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) অথবা সরকার নির্ধারিত অন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ছয় মাস মেয়াদি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স-এফটিসি) সম্পন্ন করেন। এরপর প্রফেশনাল দক্ষতা অর্জনের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে ছয় মাস মেয়াদি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ ছাড়া দেশের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অন্য ক্যাডারের মতো সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি পড়াশোনার সুযোগ তো আছেই।

বেতন ও ভাতা

সরকারি বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২ হাজার টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩ হাজার ১০০।

এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা মহানগরে ৫৫ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঈদ বা পূজাতে উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধাদি পেয়ে থাকেন।

সুযোগ-সুবিধা

এই ক্যাডারের পদোন্নতি মোটামুটি ভালো। তবে ৩১তম বিসিএসে বেশি কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পদোন্নতি জটিলতা ছিল এবং পরবর্তী আটটি বিসিএসে কাস্টমস ক্যাডারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসেনি। এর ক্যাডার এক্সপানশনের কার্যক্রম চলমান। কাস্টমস হাউসগুলোয় আবাসনব্যবস্থাসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো সরকারি কোয়ার্টারে আবাসন সুবিধা রয়েছে। কমিশনারের জন্য নিজস্ব গাড়ি সুবিধা আছে। অন্যান্য কর্মকর্তারাও দপ্তরের গাড়ি শেয়ার করে ব্যবহার করতে পারেন। আমদানি ও রপ্তানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আলাদা গুরুত্ব পাবেন। দেশের বাজেটের একটি বড় আয়ের অংশ আসে শুল্ক, আবগারি ও মূসক থেকে। তাই দেশের এ প্রধান খাতে অবদান রাখা দেশ সেবার একটা বড় সুযোগ।

কর বিভাগের মতো অবৈধ আমদানি ও রপ্তানি শনাক্তকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ১০ শতাংশ হারে বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত রিওয়ার্ড সুবিধা পেতে পারেন। তবে দপ্তরভেদে প্রচুর কাজের চাপ থাকতে পারে।

আরও পড়ুন