নতুন নিয়ম নতুন বিসিএস থেকে কার্যকর হোক

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)

নন–ক্যাডার নিয়োগে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) যে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তাতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এ পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তাঁরা অন্যায় অবিচার মনে করছেন।

একজন বলেন, বিসিএসের ইতিহাসের এই নীতিমালা হবে অন্যতম জঘন্য, বাজে সিদ্ধান্ত। কেউ বলছেন, ‘একটা বিসিএস দিয়ে চার বছর অপেক্ষা করে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বেকারদের শেষ ভরসার জায়গা পিএসসির এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ কেউবা বলেছেন, নতুন নিয়ম নতুন বিসিএস থেকে কার্যকর করা হোক।

গত শুক্রবার প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রথম আলোর ফেসবুক পাতায় পাওয়া মন্তব্যে তরুণদের এমন কিছু ক্ষোভ ও হতাশার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

এটা একটা অবাস্তব ও অমানবিক সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, ২০১৮ সালে ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছে এবং ২০২২ সালের শুরু অব্দি ৩৮তম বিসিএসের নন–ক্যাডার লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাহলে এখন কী করে সুপারিশ করার মতো ২০১৮ সালের আগের শূন্য পদ পাওয়া যাবে?
চাকরিপ্রত্যাশী, প্রমত্ত পথিক
আরও পড়ুন

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০তম, ৪১তম, ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

ফাইল ছবি

জান্নাতুন নাহার লিখেছেন, ‘বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী শূন্য পদ আসবে কোথা থেকে? ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত যেখানে অলরেডি সুপারিশ করা হয়েই গেয়েছে। নতুন নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিসিএস উত্তীর্ণ মেধাবী চাকরিপ্রার্থীরা এবং লাভবান হবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কর্মরত পদোন্নতি প্রত্যাশীরা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে নিয়োগ বাণিজ্য। আমরা এ অযৌক্তিক এবং অমানবিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখতে চাই না।’

আরও পড়ুন

নন–ক্যাডার নিয়োগের পূর্বের নিয়মই বহাল রাখা হোক। বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে বরং আরও বেশি নিয়োগ দেওয়ার বিধান আসা উচিত। দেশকে মেধাবী তরুণ প্রজন্মের সেবা থেকে বঞ্চিত করে কখনো সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সম্ভব নয়।

মো. মহাসিন আলী লিখেছেন, ‘চার বছরের বেশি সময় পর এসে ৪০তম বিসিএস এমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ৪০তমের সঙ্গে অন্যায়–অবিচার করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম নতুন বিসিএস (৪৫তম) থেকে কার্যকর করা হোক।’

মমিনুল আলম নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘২০১৮ সালের সব পদ ৩৭তম থেকে ৩৮তমকে দেওয়ার পর, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত পদগুলো ৩৮তমকে দেওয়ার পর, কীভাবে কোন যুক্তিতে ৪০তমকে ২০১৮ সালের পদ দিতে চান? ২০১৮ সালের পদ কোথা থেকে আসবে? প্রথম আলো বেকারদের আকুতি তুলে ধরেছে ঠিকই, তবে পিএসসিকে উপরোল্লেখিত মূল বিষয়ে কোনোই প্রশ্ন করেনি, যা সত্যিই দুঃখজনক!!!’

নাদিম মিয়া বলেন, ‘নীতিনির্ধারকদের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্তে কোনো কিছু যায় আসে না। বরং তারা যে সুপ্রিম এটাই প্রমাণিত হয়। কিন্তু আমাদের মতো বেকারদের জন্য এটা অনেক কিছু। একটা চাকরির জন্য দুনিয়ার ট্রেন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আতেলের মতো লেগে থাকি। যদি নিয়ম পরিবর্তন করতেই হতো তাহলে আগেই জানিয়ে দিত যাতে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারতাম।’

‘২০২১ সাল পর্যন্ত নন–ক্যাডার পোস্টগুলো ৩৭তম ও ৩৮তমদের দিয়ে দেওয়া হলো। এখন যদি ২০১৮ সাল ধরে ৪০তমের পোস্ট বরাদ্দ করে তাহলে আমরা ৪০তমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমাদের প্রাপ্যগুলো ৩৭ ও ৩৮তমদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস দিয়ে চার বছর অপেক্ষা করে এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বেকারদের শেষ ভরসার জায়গা পিএসসির এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি’, বলেন নাদিম মিয়া।

প্রমত্ত পথিকের মন্তব্য, এটা একটা অবাস্তব ও অমানবিক সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, ২০১৮ সালে ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছে এবং ২০২২ সালের শুরু অব্দি ৩৮তম বিসিএসের নন–ক্যাডার লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাহলে এখন কী করে সুপারিশ করার মতো ২০১৮ সালের আগের শূন্য পদ পাওয়া যাবে?

‘এই উদ্ভট সিদ্ধান্তের ফলে একই ধরনের সমস্যায় পড়ে বঞ্চিত হবে ৪১তম, ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের নন–ক্যাডার প্রত্যাশীরাও। অনতিবিলম্বে এই ধরনের হঠকারী ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত বাতিল চাই’, বলেন প্রমত্ত পথিক।

কপিল চক্রবর্তী বলছেন, বিসিএসে উত্তীর্ণ আট হাজার বেকারের প্রতি চরম অমানবিক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিজ্ঞ স্যারদের নিকট থেকে এমন বর্বর সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিসিএসের ইতিহাসের এই নীতিমালা হবে অন্যতম জঘন্য, বাজে সিদ্ধান্ত।