বিসিএস কথন পর্ব-৩
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা
বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। সিভিল সার্ভিসের সাধারণ ও কারিগরি বা পেশাগত—২ ক্যাটাগরিতে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কাজ, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। আজ তৃতীয় পর্বে থাকছে বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা
পররাষ্ট্র ক্যাডার
রাষ্ট্রদূত হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ও দেশের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডার অনেক বিসিএস প্রার্থীরই প্রথম পছন্দ। এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন।
পদায়ন ও দায়িত্ব
এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন, ফরেন সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমিসহ সরকারের যেকোনো দপ্তরে পদায়ন করা হতে পারে। তবে পররাষ্ট্র ক্যাডারের একটি স্বাতন্ত্র্য হলো মিশন পোস্টিং। প্রয়োজন অনুসারে একটি দেশে মিশন নির্ধারণ করা হয়। কোনো দেশে মিশন থাকে না, কোনো দেশে ছোট মিশন থাকে আবার কোনো দেশে একাধিক মিশন থাকে (যেমন ভারতে বাংলাদেশের সাতটি মিশন রয়েছে)। সাধারণত চাকরি স্থায়ী বা দুই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি সম্পন্ন হলে ছয় বছরে দুটি মিশন সম্পন্ন করতে হয় এবং আবার দুই বছরের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়।
অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও বিনিময়; আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন; বিভিন্ন ধরনের সমঝোতা স্বাক্ষর ও চুক্তি; অন্য দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা; রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ ও অন্য দেশের প্রধানদের বৈদেশিক সফর ব্যবস্থাপনা ও প্রটোকলসংক্রান্ত কাজ; অন্য দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করাই পররাষ্ট্র ক্যাডারদের প্রধান কাজ।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের মূল পদসোপান হলো সহকারী সচিব>সিনিয়র সহকারী সচিব>
পরিচালক>মহাপরিচালক>অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব>সচিব/পররাষ্ট্রসচিব (মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দায়িত্বে কয়েকজন সচিব রয়েছেন। সচিবদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমান পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে একজন সিনিয়র সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। মিশনের পদসোপান হলো, ৩য় সচিব>১ম/২য় সচিব>কাউন্সিলর>মিনিস্টার>অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার। ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির পর প্রথমে ২য় সচিব এবং পরে ১ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মিনিস্টার পদমর্যাদার কর্মকর্তা অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালনকালে ডেপুটি চিফ অব মিশন এবং হাইকমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার যেকোনো গ্রেডের হতে পারেন। মিশনের পরিসর ও গুরুত্ব বিবেচনায় অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। যে গ্রেডের কর্মকর্তাকে এই পদে পদায়ন করা হবে, তিনি সেই গ্রেডের অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার হবেন।
প্রশিক্ষণ
যোগদানের পর পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ৬ মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং (এফটিসি) সম্পন্ন করেন। এরপর এই ক্যাডারের কর্মকর্তাকে চাকরিকালীন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ১২ মাস মেয়াদি স্পেশালাইজড ডিপ্লোমেটিক ট্রেনিং কোর্স (এসডিটিসি)–সহ দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অন্যান্য ক্যাডারের মতোই সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়।
বেতন ও ভাতা
সরকারি বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০%, অন্যান্য বিভাগে ৪৫%, ঢাকা বিভাগে ৫০%), ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষাসহায়ক ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিদেশের মিশনে পদায়নকালে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা সে দেশের মর্যাদা অনুসারে বেতন ও অন্যান্য কূটনৈতিক সুবিধা পাবেন।
সুযোগ-সুবিধা
পদোন্নতি সুবিধা ভালো। অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার মতো সরকারি কোয়ার্টারে আবাসনের সুবিধা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য অফিস গাড়ি সুবিধা আছে। অন্যান্য গ্রেডের কর্মকর্তারাও শেয়ারিং ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতো এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক পাসপোর্ট (রেড পাসপোর্ট) পেয়ে থাকেন। অন্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অধিদপ্তরে চাকরি করলেও পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রথম থেকেই মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে থাকেন।