প্রশ্নপত্র ফাঁসে মাউশির নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) বাতিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার মাউশি এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তবে কী কারণে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়, ১৩মে অনুষ্ঠিত অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনিবার্য কারণে বাতিল করা হলো।
তবে, এর আগেই গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার মাউশির উচ্চপর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে এই পরীক্ষা বাতিল হতে পারে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমাদের কথা হলো ডিবি পুলিশ যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তারা যদি বলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তাহলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেব। আমার কথা হলো স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা। আমাদের ভবিষ্যতেও পরীক্ষা নিতে হতে হবে। তাই চক্রটি যদি মাউশির ভেতরও থাকে, তাহলেও যেন বের করা হয়। আমরা চাই এর রুট (উৎস) বের করা হোক। যাতে অপরাধীরা শাস্তির মুখে পড়তে পারে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য গত শুক্রবার ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার।
ওই দিন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সুমন জোয়াদ্দার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর প্রবেশপত্রের পেছনে ৭০ নম্বরের উত্তর লেখা ছিল। ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সুমন স্বীকার করেন, পরীক্ষা শুরুর ৪২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের উত্তর পেয়েছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক দিন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তাসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুঠোফোনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ডিবি বলছে, সুমনকে উত্তরপত্র পাঠান পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। গত সোমবার রাজধানী থেকে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর টিকাটুলি ও ওয়ারী এলাকা থেকে ৩৪ বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবিব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়েছেন, এমন চাকরি প্রার্থীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মাউশির এক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশ্নপত্র নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তা ফাঁস করেন বলে তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে। চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র সমাধান করে নির্ধারিত চাকরিপ্রার্থীদের মুঠোফোনে পাঠায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মাউশির ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত পুরো চক্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। বিষয়টি আমরা মাউশির যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরীক্ষা বাতিল করা না করা তাদের সিদ্ধান্ত।’