লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চালু 'বাংলা বন্ড'

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি মুদ্রায় গতকাল সোমবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের (এলইসি) তালিকাভুক্ত হয় ‘বাংলা বন্ড’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এলইসির সিইও নিখিল রাথি প্রমুখ।  ছবি: আইএফসি
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি মুদ্রায় গতকাল সোমবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের (এলইসি) তালিকাভুক্ত হয় ‘বাংলা বন্ড’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এলইসির সিইও নিখিল রাথি প্রমুখ। ছবি: আইএফসি

বিশ্বে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি ‘টাকা বন্ড’ চালু হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা বন্ড’। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় এ বন্ড চালু হয়। আর গতকালই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত হয় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলইসি)। আইএফসি গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। 

বন্ড চালু উপলক্ষে ‘দ্য রিং, দ্য বেল’ শিরোনামে আইএফসি ও এলইসির যৌথ আয়োজনে গতকাল লন্ডনে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এতে বাংলাদেশের গৌরবজনক অধ্যায়, প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সুযোগের নানা দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন বাংলা বন্ডের নানা দিক তুলে ধরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এলইসি। এতে আ হ ম মুস্তফা কামালসহ এলইসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিখিল রাথি, আইএফসির এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নেনা স্টইলকোভিক, আইএফসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রেজারার জন গনডলফো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 জানা গেছে, এলইসিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগ সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অর্থায়ন সংকটও কিছুটা দূর হবে এর মাধ্যমে। বন্ডটি হবে তিন বছর মেয়াদি।

আইএফসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবারের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ যে অনেক দূর যাবে, তার শুরুটাই হচ্ছে বাংলা টাকা বন্ড চালু। একই অনুষ্ঠানে এলইসির সিইও নিখিল রাথি বলেন, ‘বাংলা বন্ড চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠল। এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য আইএফসিকে অভিনন্দন জানাই।’

 লন্ডনে নিযুক্ত ঢাকার প্রেস মিনিস্টার আশিকুর রহমান চৌধুরী এ নিয়ে গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানান, এ বন্ডে বেসরকারি খাতের যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা সুদ পাবেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বন্ড থেকে টাকা নিয়ে যাঁরা তাঁদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম অবশ্য ভিন্নভাবে দেখেন বিষয়টিকে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুদ পরিশোধ টাকায় হবে না ডলারে হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ডলারে হলে বৈদেশিক মুদ্রার চলমান সুদ পরিশোধের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। আর টাকায় হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রাণ এগ্রো ও নাটোর এগ্রোর জন্য আইএফসির কাছে বন্ড ছেড়ে ১৬০ কোটি টাকা চায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। অনেক আগেই এর প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং আইএফসি ৮০ কোটি টাকা দেয়ও। বাকি ৮০ কোটি টাকা এখন এই বন্ড থেকে দেবে।

সুদের হার নিয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সুদ এত দিন ৯ শতাংশের একটু বেশি থাকলেও এখন তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, প্রাথমিকভাবে তিন বছর মেয়াদি করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর, এমনকি ১০ বছর মেয়াদি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতেও প্রথম দিকে তিন বছর মেয়াদি রুপি বন্ড ছাড়া হয়েছিল। পরে তা পাঁচ বছর করা হয় ও বর্তমানে তা ১০ বছর।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আট বছর ধরেই টাকা বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভা শেষে মুহিত জানিয়েছিলেন, ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এ দফায় ৮০ কোটি টাকার ছাড়া হলেও শিগগিরই এই বন্ডের আকার হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পর্যায়ক্রমে তা ৮ হাজার কোটি টাকাতেই উন্নীত হবে।